
যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কি না— এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কখনো কখনো এই সংশয়-সন্দেহ গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে।”
রবিবার (২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহের অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, “পতিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে জনগণের নির্বাচনের প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। অথচ ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও এখন কিছু সময় জনগণের মনে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে— যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?”
তিনি আরও বলেন, “শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে গত ১৫ বছরে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। উদ্বেগের বিষয় হলো, বর্তমানে আবারও বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ যদি ঐক্যবদ্ধ থাকেন, তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।”
ফ্যাসিবাদবিরোধী সব পক্ষকে সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারকেও যতটুকু সম্ভব যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি। অথচ আমরা দেখছি, সমগ্র দেশবাসী দেখছেন, প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্যনতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে যেভাবে গণতন্ত্র উত্তোরণের পথকে কেমন যেন সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। এর পরিণতি সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘কৌশল এবং অপকৌশলের মধ্যে আমরা পার্থক্য বুঝতে ব্যর্থ হলে কোনো অগণতান্ত্রিক কিংবা অপশক্তির কাছে শেষ পর্যন্ত বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পথে হাঁটতে হয় কি না, বাংলাদেশের এই মুহূর্তে মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন বিপদের কথাও স্মরণ রাখার জন্য আমি বিনীত অনুরোধ জানাই।
একক প্রার্থীকে বিজয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ কাজ করার আহবান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিগগিরই পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম আমরা জানিয়ে দেব দলের পক্ষ থেকে। দল যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবে অনুগ্রহপূর্বক তাঁকে বিজয়ী করে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে প্রত্যেকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ দয়া করে কাজ করবেন। মনে রাখবেন, আপনাদের চারপাশে সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গুপ্ত স্বৈরাচার কিন্তু ওত পেতে রয়েছে। সুতরাং আপনাদের নিজেদের মধ্যে রেষারেষি, বিবাদ, বিরোধ এমন পর্যায়ে নেওয়া ঠিক হবে না, যাতে করে প্রতিপক্ষ আপনাদের মধ্যকার বিরোধের সুযোগ নিতে পারে।
ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতবেন—জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রতি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী। আপনারা যাঁরা নিজ নিজ এলাকায় জনগণের সমর্থন পেতে গণসংযোগ করছেন আপনারা সবাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত শহীদ জিয়ার অনুসারী, খালেদা জিয়ার সৈনিক, বিএনপির কর্মী, ধানের শীষের সমর্থক। মনে রাখবেন, ধানের শীষ জিতলে আপনি জিতেছেন বা জিতছেন বা জিতবেন। বিজয়ী হবে দেশ এবং গণতন্ত্র।’
নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতি অমর্যাদা হয়, দেশ এবং জনগণের জন্য মাদার অব ডেমোক্রেসির অবদান প্রশ্নবিদ্ধ হয়, আপনারা এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। সারা দেশে বিএনপির লাখো- কোটি সমর্থক বিব্রত হয়, আপনারা কেউ এমন কোনো আচরণ দয়া করে করবেন না। আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন। জনগণকে সঙ্গে রাখুন। আপনাদের সামনে আমি সেই স্লোগানটি উচ্চারণ করতে চাই, ‘ভোট দিলে ধানের শীষে, দেশ গরব মিলে-মিশে’।”
বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘জনগণের বহুল প্রতীক্ষিত এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে গণতন্ত্রকামী জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি সম্ভব সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে। এর অংশ হিসেবে দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘জনসমর্থিত এবং জনপ্রিয় দল হওয়ার কারণে প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন, করাটাই স্বাভাবিক। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এটি অবশ্যই গৌরব এবং সম্মানের। দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রত্যেককে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের যাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মনোনয়নবঞ্চিত হবেন।’
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রবাসী ভোট প্রক্রিয়া আরো সহজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রবাস থেকে এবারই প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির কারণে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটি কারো কারো কাছে কিছুটা জটিল মনে হতে পারে। তবু প্রবাসীদের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ চালু করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনকে আমাদের দলের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাই।’
দেশে নারীদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশে এবং বিদেশে আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। অথচ নারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্র এবং সমাজের উদাসীনতা ইদানীং মনে হয় একটু প্রকট হয়ে উঠছে অথবা কোথায় জানি কী একটা সন্দেহ দোলা দিয়ে উঠছে। একটি পত্রিকার নিউজে দেখলাম, গত আগস্ট মাসে সারা দেশে ৯৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নারী এবং শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে রাষ্ট্র অবশ্যই উদাসীন থাকতে পারে না। সরকার এবং প্রশাসনের অবশ্যই ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সাত্তার পাটোয়ারীর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বিশ্বের প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিমের তালিকায় ৫০তম ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



