জুমবাংলা ডেস্ক : বাবা-মা সন্তানের জন্য পরম মমতা আর চরম ভরসার স্থান। দত্তক নেওয়া সন্তানের প্রতি পালক বাবা-মায়ের পরম মমতা যেমন দেখেছি, তেমনি নৃশংসতাও চোখে পড়ে। বরং নৃশংসতার মাত্রাই যেনো একটু বেশি।
নাজনিন আক্তারকে (৯) ছয় বছর আগে দত্তক নেন ফেনীর জামাল উদ্দিন ও নাজমা আক্তার দম্পত্তি। নিজেদের চার ছেলে, মেয়ে না থাকায় তারা ফুলগাজীর এক দরিদ্র পরিবার থেকে তিন বছর বয়সী নাজনিনকে দত্তক নেন।
বাবা-মায়ের মতো পরম মমতায় সন্তানকে লালন-পালনের কথা থাকলেও মনে মনে ভিন্ন ছক কষেছিলেন ওই দম্পত্তি। তাদের আসলে দরকার ছিলো একজন স্থায়ী গৃহকর্মী। তাই শুরু থেকেই অনাদর অবহেলায় বড় হতে থাকে নাজনিন। একটু বড় হলে তাকে টুকটাক কাজে লাগানো শুরু হয়। সন্তান হিসেবে বাড়িতে ঢুকলেও ধীরে ধীরে গৃহকর্মীর যায়গা পাকাপোক্ত হয়ে যায় নাজনিনের। মারধর, লাঞ্ছনা তার নিত্যসঙ্গী হয়ে ওঠে। মাত্র নয় বছর বয়সে অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে তার।
গতকাল বুধবার (৮ জুলাই) রাতে সর্বশেষ নৃশংসতার শিকার হয় নাজনিন। শিশুটিকে শুধু পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ওই দম্পত্তি। মুমূর্ষু ও রক্তাক্ত অবস্থায় রাতের অন্ধকারে বাড়ির বাইরে ফেলে দিলেন পাষণ্ড মা-বাবা।
বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ফেনী শহরের রামপুর সৈয়দ বাড়ি সংলগ্ন মোস্তফা কমিশনারের বাড়ির নিচতলা হতে তাকে উদ্ধার করে র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের সদস্যরা। পরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এরপর অভিযুক্ত গৃহকর্তা জামাল উদ্দিন ও গৃহকর্তী নাজমা আক্তারকে আটক করে র্যাব।
বুধবার (৮ জুলাই) রাতে নাজনীনকে উদ্ধারকারী প্রতিবেশী রুনা ইয়াসমিন বলেন, ‘শিশুটিকে নির্যাতন করে বাড়ির বাইরে ফেলে রাখে তার বাবা-মা। রক্তাক্ত অবস্থায় নাজনিনকে ঘরে আনি। রাতভর তার জ্বর ছিলো। প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে ক্ষতস্থান হতে রক্ত পড়া বন্ধ করা হয়েছে।’
অভিযুক্ত গৃহকর্তী নাজমা আক্তারের ভাই রিপন হোসেন বলেন, ‘আমার বোনের চার ছেলে। মেয়ে নেই দেখে নাজনিনকে দত্তক নেন। প্রায়ই মেয়েটিকে মারধর করা হতো। মেয়েটিকে দত্তক আনা হলেও কাজের মেয়ে হিসেবেই দেখতেন। রাতে তাকে বারান্দায় রাখা হতো। কিছু হলেই নির্যাতন করা হতো।’
অভিযুক্ত গৃহকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের দরবারপুর গ্রামে নাজনিন আক্তারের নানা-নানুর কাছ থেকে দত্তক নেওয়া হয়। তবে তাকে নিজেদের মেয়ের মতো করেই বড় করছিলাম। বাচ্চারা দুষ্টুমি করলে একটু আধটু শাসন তো করতেই হয়।
র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. নুরুজ্জামান জানান, আহত নাজনিন আক্তারকে অভিযুক্ত পরিবারটি ছয় বছর আগে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তারা বাচ্চাটিকে কাজের মেয়ে হিসেবে দেখতে শুরু করে। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে নাজনিনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সে সুস্থ হলে সমাজ সেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।