জুমবাংলা ডেস্ক : আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থেকে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। জুলাই- আগস্ট মাসের গণ-অভ্যুত্থানে এই ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীদের ভূমিকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেই কি কোনো সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে? আইনে কী রয়েছে? আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা কী বলছেন?
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা বলছেন, আইনানুযায়ী সংগঠন নিষিদ্ধ হোক বা না হোক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে।
একই সাথে সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দিন থেকে যদি ওই সংগঠনের ব্যানারে কেউ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তবে তাকে গ্রেপ্তার বা শাস্তির আওতায় আনা যাবে।
আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কোনো মামলার আসামি হলে সেই ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার’
প্রায় প্রতিদিনই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করছে। রাজধানী ঢাকায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা জানানো হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে সেক্ষেত্রে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো সংগঠন কোনো তৎপরতা চালায় সে ক্ষেত্রে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। অর্থাৎ কোনো ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে।’
পুলিশের দেওেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি, হল কমিটিসহ মোট ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হত্যার অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজশাহীতে সরকারি মহিলা কলেজে পরীক্ষার হল থেকে এক ছাত্রলীগ নেত্রীকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আলোড়ন তুলেছে। বিস্ফোরক মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।
‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ অনুযায়ী সরকার সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার এই আইন অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামী, এর অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে গত ১ আগস্ট নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। একই আইনে আগে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক বলছেন, ‘কারো বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অপরাধের অভিযোগ থাকলে গ্রেপ্তার করা যাবে। ওদের বিরুদ্ধে কোনো স্পেসিফিক অপরাধের অভিযোগ থাকলে যেমন মারামারি, গুলি করেছে, আগুন জ্বালিয়েছে ওইটার ক্ষেত্রে সংগঠন নিষিদ্ধ হোক বা না হোক কিছু যায় আসে না, গ্রেপ্তার করতে পারবে। ব্যক্তিগত ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে ছাত্রলীগ হোক ছাত্রদল হোক অপরাধের জন্য অ্যারেস্ট করতে পারবে। নিষিদ্ধ সংগঠন যদি সাংগঠনিক কাজ করে তখন তাকে অ্যারেস্ট করতে পারবে।’
আরেকজন আইনজীবী সিহাব উদ্দিন খান বলছেন, ‘আগে ছাত্রলীগ করেছে, শুধু এই কারণে গ্রেপ্তার করলে সেটা আইনসিদ্ধ হবে না। ছাত্রলীগের পদধারী বা এ সংগঠনের রাজনীতি করলেই গ্রেপ্তার করা যাবে বিষয়টি এমন নয়। নিষিদ্ধ করার পর থেকে যদি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা তাদের ওই ব্যানারে সংগঠনের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, সভা-সমাবেশ করে বা কোনো ধরনের কর্মসূচি দেয় তাহলে শাস্তির আওতায় আসবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। কিন্তু কমিটিতে থাকলেই গ্রেপ্তার করা যাবে বিষয়টি এমন নয়।’
উদাহরণস্বরূপ তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় যে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেই গ্রেপ্তার করা যাবে। যদি কোনো ছাত্রলীগকর্মী কোনো হত্যা মামলার আসামি হয় তবে তাকে যেকোনো সময় গ্রেপ্তার করতে পারবে।’
আইনে শাস্তি কী?
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সন্ত্রাসী কাজ করলে, সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিলে, সন্ত্রাসী কাজের জন্য প্রস্তুতি নিলে বা সন্ত্রাসী কাজ সংঘটনে সাহায্য বা উৎসাহ দিলে সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত বলে বিবেচিত হবে। এ ছাড়া সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত কাউকে সমর্থন বা সহায়তা দিলেও সেই ব্যক্তি, সত্তা বা সংগঠন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত বলে বিবেচিত হবে।
এ আইনের ১০ ধারায় অপরাধ ও দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করেন, তাহলে তিনি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তির দুই তৃতীয়াংশ মেয়াদের যেকোনো কারাদণ্ডে, অথবা অর্থদণ্ডে, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি উক্ত অপরাধের জন্য নির্ধারিত শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হয়, তাহলে অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব চৌদ্দ বছরের কারাদণ্ড হবে, কিন্তু তা চার বছরের কম হবে না। দোষী প্রমাণিত হলে অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে এই আইনের আলোকে আদালত আসামিদের সাজা নির্ধারণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।