আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে বিদায় নেবার পর ম্যার্কেল আবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন৷ ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার তীব্র সমালোচনা করে তিনি কিয়েভের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রতি সমর্থন জানালেন৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে বার্লিনের ক্ষমতাকেন্দ্রে থাকার পর জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল লোকচক্ষুর অন্তরালেই ছিলেন৷ কিন্তু সেই নিশ্চিন্ত অবসর জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা৷ ম্যার্কেলেরই আমলে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির নিবিড় সম্পর্ক নিয়ে নানা অপ্রিয় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ এমনকি ২০১৬ সালে রাশিয়া ক্রাইমিয়া দখলের পরেও ম্যার্কেল মস্কোর সঙ্গে যেভাবে সখ্য বজায় রেখেছিলেন, সে বিষয়ে এখন ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে দেশে-বিদেশে যাবতীয় সমালোচনা ও চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে সরাসরি গ্যাস আমদানি করতে তিনি যেভাবে ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ প্রকল্প আঁকড়ে ধরে ছিলেন, সেই অবস্থান এখনো প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ তার উত্তরসূরী ওলাফ শলৎস অবশ্য সেই প্রকল্প আপাতত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন৷ ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের উপর হামলা শুরু হবার পর ম্যার্কেল এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, যে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না৷
দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস নীরবতার পর মুখ খুলেছেন ম্যার্কেল৷ বুধবার সন্ধ্যায় জার্মানির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনের এক সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি রাশিয়ার তীব্র নিন্দা করেন৷ তিনি বলেন, ইউক্রেনের উপর হামলার মাধ্যমে সে দেশ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে৷ ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের ইতিহাসে বিশাল ভাঙন দেখা যাচ্ছে৷ ম্যার্কেল ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে সে দেশের আত্মরক্ষার পূর্ণ অধিকার রয়েছে৷ ইউক্রেনের জন্য জার্মানির বর্তমান সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, জি-সেভেন ও জাতিসংঘের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, রাশিয়ার ‘বর্বোরোচিত আগ্রাসী যুদ্ধ’ বন্ধ করতে এমনটা করা প্রয়োজন৷
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ইউক্রেন সংকটের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কেও সতর্ক করে দেন৷ তাঁর মতে বর্তমান ঘটনাবলির সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখা যাবে৷ শুধু ইউক্রেনের মানুষ নয়, ইউরোপও সেই প্রভাব টের পাবে৷ ইউক্রেনের বুচা শহরে গণহত্যাকে নিরীহ মানুষের উপর ভয়াবহ নিপীড়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরেন ম্যার্কেল৷ এমন ‘অন্তহীন দুঃখ’-এর মাঝে আশার আলো হিসেবে তিনি ইউক্রেনের অনেক প্রতিবেশী দেশের বিপুল সমর্থনের উল্লেখ করেন৷ তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা হিসেবে শান্তি ও স্বাধীনতা চিরস্থায়ী ভেবে নিয়ে কখনোই উদাসীন থাকা যাবে না৷
বুধবারের ভাষণে ম্যার্কেল নিজের ক্ষমতাকালে রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব সম্পর্কে কোনো আক্ষেপ প্রকাশ করেন নি৷ বরং ক্রাইমিয়া দখলের পরেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজনীয় ছিল বলে তিনি মনে করেন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতেও সংলাপ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন৷ তবে তার ক্ষমতাকালে দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন অনেক নেতা জার্মানির রাশিয়া-নীতি সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আপোশের নীতি হয়তো অতিরিক্ত আশাবাদের ফসল ছিল৷ বিশেষ করে রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরতা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করছেন অনেক নেতা৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।