জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের নৌ সেক্টরে প্রধান সমস্যা হলো নাব্যতা সংকট। এরপর নৌ পথে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি, নদী দূষণসহ উপেক্ষিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পাশাপাশি স্পিড লিমিট না মেনে নৌযান চালানোর কারণে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া নৌ সেক্টরে বৃহত্তর অভ্যন্তরীণ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া না হলে দেশের জন্য বড় ক্ষতি হবে।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নৌ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা এসব তথ্য তুলে ধরেন।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দুর্ঘটনামুক্ত নৌ চলাচল ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতি বছরের মত এ বছরও ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২৪’ পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিশ্বের পঞ্চম দূষিত নদী হলো বুড়িগঙ্গা। এই নদীতে দিনে ৯০ মেট্রিক টন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। তুলনামূলক বিবেচনায় দেখা যায় বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নদী ‘চিতারুম’ চেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে ‘বুড়িগঙ্গা’। এমন বাস্তবতায় নৌ পরিবহন সেক্টরকে রক্ষা করতে সকল পর্যায় থেকে আন্তরিকভাবে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
বক্তারা বলেন, সদরঘাটে নদীতে যত বর্জ্য পড়ে সারা দেশের নৌপথে তা পড়ে না। কলকারখানা ও মানববর্জ্য ৯০-৯২ ভাগ নদী দূষণ হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যদি নদী নালা শুকিয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশের প্রাণ থেমে যাবে। সরকার নিরাপদ নৌযান ও দূষণমুক্ত নদী গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশপ্রেম না থাকলে, দেশের জন্য কাজ না করলে এগিয়ে যাওয়া যায় না বলেও যোগ করেন তিনি।
ম্যানমেইড বর্জ্য, শিল্প-কারখানার বর্জ্য দূষণমুক্ত করতে কাজ করার কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান এ লক্ষ্যে আমরা এখনো পৌঁছতে পারি নাই। কিছুটা ঘাটতি দুর্বলতা রয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান’ এ লক্ষ্যে পৌঁছতে না পারবো ততদিন আমরা ‘দূষণমুক্ত নদী ও নিরাপদ নৌযান, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে রাখবে অবদান’ এ প্রতিপাদ্যটি ব্যবহার করব। বিশ্বের অনেক বড় বড় নদী টেমস, হাইমস, রাইন, হান নদী একসময় দূষিত ছিল; এখন সেখানকার পানি পান করা যায়।
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, দেশের অপার সম্ভাবনাময় হলো নদী ও সমুদ্র সম্পদ। এসবকিছু যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবেই।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামাল বলেন, নৌপথে অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার। নিরাপদ নৌপথ গড়ে তুলতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কোন ধরণের আপোস করা যাবে না।
নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধে কাজ করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সচল প্রকল্পের মধ্যে আমরা সাত হাজারে পৌঁছেছি।
বিভিন্ন দেশের দূষিত নদীর উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, একটা সময় বুড়িগঙ্গায় কোন বর্জ্য থাকবে না। এখন তো বুড়িগঙ্গার পানি অযুর উপযোগী নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির রং বদলাতে তা আর পবিত্র থাকে না। পবিত্র পানিতে অযু করতে হয়।
সচেতনতার অভাব, স্বদিচ্ছা আর অবহেলায় নদী নষ্ট করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জলযানের ময়লা তীরে ফেলতে হবে। পানি তো সবকিছু ফেলার জায়গা নয়।
বিগত বছরগুলোতে নৌপথ সংকুচিত হওয়ার কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন বীরবিক্রম বলেন, যাত্রী পরিবহনে রীতিমতো দুর্যোগ নেমে এসেছে। যে পথে বেশি যাত্রী হতো তা বন্ধ। যাত্রী কমায় মালিকরাও দুর্যোগের মধ্যে আছেন। দেশে ১৯ হাজার জাহাজের কথা বলা হলেও অনেকগুলো ইতোমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া নৌ পথের বড় সমস্যা হলো নাব্যতা।
দুর্ঘটনা এড়াতে গতি মেনে নৌযান চালানোর অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, একটা জাহাজের সঙ্গে আরেকটা জাহাজ লাগিয়ে দুর্ঘটনা আর হতে দেব না। আইনভঙ্গের দায়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে যদি কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে তা মাথা পেতে নেব।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল (যাপ) সংস্থার সাবেক প্রধান উপদেষ্টা গোলাম কিবরিয়া টিপু বলেন, নৌ পাথ এখন ৭০ ভাগ ব্যবসা কমেছে। নৌ শ্রমিকদের ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া।
তিনি বলেন, সদরঘাটে নদীতে যত বর্জ্য পড়ে সারা দেশের নৌপথে তা পড়ে না। ঢাকার আশপাশের সকল বর্জ্য নদীতে পড়া ঠেকানোর পদক্ষেপ নিলে বুঝব সরকার নদী রক্ষায় আন্তরিক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।