জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্র জনতার অভ্যুত্থ্যানের পর স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও বৈষম্য দূর হয়নি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।
দেশের স্বাধীনতার তিপ্পান্ন বছরে ইতিহাসে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) বা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান। এ যাবতকালে পূর্নাঙ্গ অধ্যাপক ছাড়া এই হাসপাতালে পরিচালক পদে নিয়োগ পায়নি কেউ।
সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়। একইসঙ্গে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ করা হয়।
ডা. মো. আবুল কেনান কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক কাজী শামীম উজ্জামান। তাকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসেবে গোপালগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে সংযুক্ত করা হয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
কাজী শামীম উজ্জামানকে ২০২৩ সালের ৭ আগস্ট পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পঙ্গু হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নতুন ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান Doctors Association of Bangladesh (DAB) এর একজন নেতা হওয়ায় তাকে রাজনৈতিক বিবেচনায় এই পদে বসানো হয়েছে। যদিও স্বনামধন্য এই হাসপাতালে নিয়োগে সকলের আশা ছিল যোগ্য লোককে বসানো হবে।
পঙ্গু হাসপাতালের একজন অধ্যাপক বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছরে ‘জগদ্দল পাথর’ মতো চেপে বসা স্বৈরাচারকে পতন ঘটিয়েছে ছাত্র-জনতা বুকের তাজা প্রায় দিয়ে। এই আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল দেশের সকল পর্যায় থেকে বৈষম্য দূর করা। অথচ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও স্বনামধন্য হাসপাতালের পরিচালক নিয়োগে দেখছি চরম বৈষম্যের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, পঙ্গুতে বর্তমানে কর্মরত সাতজন পূনাঙ্গ অধ্যাপক রয়েছে। তারপরও এখানে পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাহিরের কোন হাসপাতালের একজন সহযোগী অধ্যাপককে। আমরা অধ্যাপক হয়েও নিচের একজন কর্মকর্তাকে স্যার বলে সম্বোধন করা চরম বৈষম্য।
আরেকজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, পঙ্গুর মত একটি হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জারী চিকিৎসা শাস্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে অভিজ্ঞাতা থাকতে হয়। তিনি কখনো পঙ্গুতে পড়াশুনা করেননি এবং একদিনের জন্যও চাকরি করেননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে Master of Surgery (MS) করেছেন।
তিনি আরও বলেন, এই হাসপাতাল থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়া হয়। তাই এ হাসপাতালে পরিচালক পদে বসতে হলে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিতে তার টিসিং দেয়ার যোগ্যতা থাকা দরকার। যদিও তিনি আগে যে হাসপাতালে ছিলেন সেখানে এমন ডিগ্রিই ছিলনা। একজন ব্যক্তিকে রাজনৈতিক বিবেচনায় বাসানো এটা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শের-এ-বাংলা নগরে অবস্থিত একটি অর্থোপেডিক হাসপাতাল। এর মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউট রয়েছে। আগে এই প্রতিষ্ঠানের তত্বাবধানে কৃত্তিম অঙ্গ তৈরি ও সংযোজন করা হতো।
১৯৭২ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে অস্থায়ী ভাবে পঙ্গু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল জরুরী ভিত্তিতে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করা। এটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন বিদেশি চিকিৎসক ডক্টর আরজে গাষ্টন, তারপর পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। ২০০২ সালের অক্টোবরে ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর) করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।