গোপাল হালদার, পটুয়াখালী: ‘মুজিববর্ষের’ উপহার সেমি পাকা ঘর পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছেন পটুয়াখালীর অবহেলিত ও অনগ্রসর ‘মান্তা’ সম্প্রদায়ের মানুষরা। তবে তাদের এখন একমাত্র চিন্তা মৃত্যুর পর কবরের জায়গা পাওয়া নিয়ে। কারণ তাদের নিজস্ব কোনও জমি নেই।
এই জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নে ১৫০টি মান্তা পরিবারে ৫০০ মানুষের বাস। এখানকার অধিকাংশ মানুষ আগে মাছ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তবে এখন দিনমজুর পেশায় বেশিরভাগ জড়িত।
একটা সময় ছিল অবহেলিত ও অনগ্রসর মান্তা সম্প্রদায়ের মানুষরা ভাসমান জীবন যাপন করতো। মূলতঃ নৌকায় জন্ম তাদের। বসবাস এবং মৃত্যুও সেখানে। নৌকায় মাছ ধরে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা। বর্তমানে ‘মুজিববর্ষের’ উপহার সেমি পাকা ঘর পেয়ে নতুন জীবন পেয়েছে ওই সম্প্রদায়ের মানুষরা।
আগে মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নৌকায় নৌকায় মাছ ধরে ও বিক্রি করে দিন কাটাতেন। ঝড়-বন্যায় অনেকের মৃত্যুও ঘটেছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মাথার ওপর যেমন ছাদ পেয়েছেন, তেমনি জীবন বদলানোর নতুন আশাও দেখছেন তারা। আর খাওয়া-দাওয়া, ঘুমানোর কোনো চিন্তা নেই। এখন শুধু মরার পর যেন সাড়ে তিন হাত মাটিতে শরীরটা ঢাকতে পারেন এমন একটা জায়গা পাওয়ার নিশ্চয়তা চান তারা।
মান্তা সম্প্রদায়ের আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘আমার বাবা যখন মারা যায় তখন আমি লাশ নৌকায় করে এই চর ওই চর করতে করতেই দিন পার হয়ে যায়। আমার বাবার লাশ দাফন করার জন্য সারে তিন হাত মাটি কেউই দেয়নি। পরবর্তীতে নদীর পারে লাশ দাফন করি। বাংলাদেশ সরকার আমাদের থাকার জায়গা দিলেও কবরস্থানের জন্য কোনো জায়গা নেই। আমাদের মান্তা পরিবারের একটাই দাবি-সরকার তো আমাদের ভাসমান স্কুল দিয়েছে ঘর দিয়েছে এখন যদি কবরস্থানের জন্য একটু জায়গা নির্ধারণ করে দেয় তাহলে মরেও শান্তি পাবো।’
এই সম্প্রদায়ের আরেক সদস্য হারুন সরদার বলেন, ‘কাইন্দা কাইন্দা চোহের পানি দিয়া যদি গাং বানাই তারপরও আমাগো মরার পর জায়গা দেয় না। কতো মানষের হাত পাও ধরি তারাপরও আমাগো কোনো জায়গা দেয় নাহ।’
মান্তা সম্প্রদায়ের নারী সদস্য ময়না বেগম বলেন, ‘আমার সন্তান মারা যায় পাঁচ বছর আগে। সন্তান মারা যাওয়ার পরে কান্নাকাটি করেও কারো কাছে কবরের জন্য সারে তিন হাত মাটি ভিক্ষাও পাইনি। এখন সরকার যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে মরেও একটু শান্তি পাবো।’
বিষয়টি মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থাপন করে জমি অধিগ্রহণ করে স্থায়ী কবরের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডা. জহির উদ্দিন আহমেদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।