জুমবাংলা ডেস্ক : নান্দনিক ক্যাম্পাস, সামনে সবুজ ঘাসে মোড়ানো সুবিশাল খেলার মাঠ। সুপ্রশস্ত সাততলা ভবনে গোছানো অত্যাধুনিক শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া- সৃজনশীলতা বিকাশে রয়েছে নানামুখী আয়োজন। স্কুল লাগোয়া বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে উঁকি দিচ্ছে সুইমিংপুলের স্বচ্ছ নীল পানি। এর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য সেখানে আরো ২০ রকমের প্রচলিত খেলার সুযোগ থাকছে।
বিশ্বমানের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার অবারিত সুযোগ নিয়ে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি যাত্রা করছে বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এন ব্লকে ১০ বিঘা জমির ওপর আধুনিক স্থাপত্যশিল্পের ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে সাততলা স্কুল ক্যাম্পাস। জাতীয় শিক্ষাক্রমের বাংলা ও ইংলিশ ভার্সনে স্কুলে নার্সারি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকার্যক্রম চালু হচ্ছে। এ স্কুলের কারিকুলাম এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীদের প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
এতে তারা আধুনিক জীবনের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের বাধা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে এবং ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবে।
বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষার মান উন্নত করার পাশাপাশি খেলাধুলা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা বিকাশে জোর দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পড়াশোনায় উন্নত বিশ্বের স্কুল থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে বিশ্বমানের শিখন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। এ স্কুলের বিশেষত্ব পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার সব ধরনের আয়োজন থাকছে।
ঢাকা শহরে মাঠের অভাবে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে না। বসুন্ধরা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে প্রচলিত সব ধরনের খেলাধুলার সুযোগ থাকছে। সুইমিংপুলে সাঁতার শেখার জন্য থাকছেন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক। এ জায়গায় অনন্য এ প্রতিষ্ঠান।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী বছরের ১ জানুয়ারি স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
আমরা শিশুদের পড়াশোনার পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করছি। পুরো স্কুল ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলবাসে ওঠার এবং নামার সময় বাবা-মায়ের কাছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বার্তা পৌঁছে যাবে।’
স্কুল সূত্রে জানা যায়, বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যাধুনিক ও নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। ভবনের দুই পাশ আর মাঝখান মিলিয়ে তিনটি করিডর রয়েছে। এ ছাড়া চারপাশে রয়েছে খোলা বারান্দা এবং লিফটের সুবিধা। এতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতে পারবে। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রয়েছে শ্রেণিকক্ষসহ পুরো ক্যাম্পাসে।
সরেজমিন স্কুল ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, সুপ্রশস্ত গোলাকার সিঁড়ি উঠে গেছে উচ্চতার শিখর স্পর্শ করতে। স্কুলটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে মনে হয় এক বিশ্বজগৎ। অঙ্কনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে বাবা-মায়ের হাত ধরে প্রথম স্কুলে আসা ছোট্ট শিশুটির দুরন্ত শৈশব, উচ্ছলতায় ভরা কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যের উদ্দীপনায় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়ার গল্প। এখানে হাত বাড়ালেই শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অন্বেষণ করে আলোকিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারবে। স্কুলে প্রবেশ করার জন্য শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল আইডি কার্ড ব্যবহার করতে হবে। এ কার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিস, ক্যাফেটেরিয়া এমনকি টিউশন ফি পর্যন্ত দিতে পারবে। কার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের স্কুল প্রাঙ্গণ ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাশলেস লেনদেনে ভূমিকা রাখবে এ ডিজিটাল আইডি কার্ড। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সখ্য গড়ে তুলতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। ইন্টারেকটিভ লার্নিং প্ল্যাটফরম, অনলাইন রিসোর্স এবং ডাটাবেইসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বব্যাপী তথ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারবে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিসর বিস্তৃত হবে এবং তারা আরো বেশি দক্ষ হতে পারবে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিটি শ্রেণিকক্ষের আয়তন ১ হাজার বর্গফুটের মতো। শ্রেণিকক্ষগুলো দুই সারিতে তৈরি করা হয়েছে। এখানে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ বিশেষভাবে তৈরি করা, যা শিক্ষার্থীদের নিত্যনতুন বিষয় নিয়ে গভীরভাবে শেখার সুযোগ করে দেবে। প্রতিটি শ্রেণির চারটি শাখাকে ভিন্ন ভিন্ন রং নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এই রং বিভিন্ন মূল্যবোধের প্রতীক, যা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে প্রতিফলন ঘটাবে। যেমন নীল রং দিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষা, সবুজ রং দিয়ে শান্তি, হলুদ রং দিয়ে আত্মবিশ্বাস, কমলা রং দিয়ে সংকল্প বোঝানো হয়েছে। স্কুলের প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শ্রেণিকক্ষে স্মার্ট বোর্ড, প্রজেক্টর রয়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, খেলাধুলা ও শারীরিক চর্চা শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশ এবং উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।
এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন খেলার সুযোগ রাখা হয়েছে। যেমন ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, কাবাডি, সাঁতার ইত্যাদি। স্বনামধন্য প্রশিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে স্কুল মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার জগতে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে শিক্ষার্থীরা। শিশুদের প্রতিভা বিকাশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গৌরবান্বিত হবে বাংলাদেশ।
স্কুলের কারিকুলাম বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আনিছুর রহমান বলেন, বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের কারিকুলাম খুবই সংগঠিত ও ভারসাম্যপূর্ণ। এতে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য এবং গভীরতা নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে সৃজনশীল এবং ব্যাবহারিক শিক্ষার সুযোগও রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়াতে নাচ, গান, নাটক, অঙ্কনের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারবে। প্রতিটি ক্লাবের জন্য রয়েছে আলাদা স্টুডিও। এ জন্য স্কুলে রয়েছে ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাব। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে থাকছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
জানা যায়, বসুন্ধরা পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব। তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের তৈরি করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখানো জ্ঞান। বিশেষভাবে প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও কোডিং শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হবে। অত্যাধুনিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ম্যাথ ল্যাবরেটরি রয়েছে। এ দুটি ল্যাবরেটরি শিক্ষার্থীদের শেখার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস বাড়াতে তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিক লাইব্রেরি। লাইব্রেরিতে ছোটদের জন্য আলাদা বইয়ের স্বর্গরাজ্য তৈরি করা হয়েছে, যেন তারা বই পড়তে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ই-লাইব্রেরিও সংযুক্ত করা হয়েছে। আরো রয়েছে মাল্টিপারপাস হলরুম, গ্যালারি এবং আধুনিক ক্যাফেটেরিয়া।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।