জুমবাংলা ডেস্ক : পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা। সাগরঘেঁষা ১৫ কিলোমিটার পথ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যানজট ঠেকাতে নতুন এই সড়ক নির্মাণে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) এই পথটাকে বলছে আউটার রিং রোড। কিছুটা কাজ বাকি থাকায় কাগজে-কলমে এখনও চালু হয়নি সড়কটি। তার পরও ওই পথে চলছে ছোট-বড় সব গাড়ি। এ সুযোগে চার লেন সড়কটির দুই লেনকে রীতিমতো ‘টার্মিনাল’ বানিয়ে ফেলেছেন ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চালকরা। চালুর আগেই সড়কটি বড় বড় যানবাহনের দখলে চলে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রকল্প সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিদের কপালে। তাঁরা বলছেন, অবৈধভাবে এভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হলে আনুষ্ঠানিক চালুর পর সড়কটির সুফল মিলবে না। বিষয়টি ট্রাফিক পুলিশকে জানানোর পরও এই সংকটের কিনারা হচ্ছে না।
সরেজমিন দেখা যায়, আউটার রিং রোডের হালিশহর ফুল চৌধুরীপাড়া এলাকায় সড়কের এক লেনজুড়ে সারি সারি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে গাড়িগুলো এখানে পার্কিং করা হয়। সড়কটির এ এলাকায় অর্ধশতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া চৌচালা, আনন্দবাজার ঘাট, আকমল আলী রোডের মাথা, খেজুরতলা, পতেঙ্গা হাউজিং কলোনি রোডের মাথা ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় শত শত কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও দূরপাল্লার বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। তবে গাড়িগুলোতে চালক ও চালকের সহকারী- কাউকে পাওয়া যায়নি।
চউকের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক হাসান বিন শামস বলেন, ‘নগরের ভেতরে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ চলায় চালুর আগেই সড়কটি দিয়ে গাড়ি চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে দুই লেনে সারি সারি ভারী যানবাহন পার্কিং করে রাখায় সড়কের পুরো সুফল মিলছে না। এ বছরের মধ্যেই সড়কটির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। পরে সড়কটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হলে এই অবৈধ পার্কিং ফ্যাসাদ বাড়াবে। বিষয়টি নগর পুলিশকে একাধিকবার জানিয়েছি। তারা সরেজমিন পরিদর্শনও করেছে। তবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-পশ্চিম) তারেক আহমেদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আছে। তবে কোনো ট্রাক টার্মিনাল নেই। বন্দরে ঢোকার জন্য অপেক্ষমাণ পণ্যবাহী গাড়ি সড়কে পার্কিং করে রাখেন চালকরা। তাঁদের এক সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে অন্য সড়কে গিয়ে পার্কিং করেন। কখনও মামলা দেওয়া হয়, কখনও জব্দ করা হয় গাড়ি। তাঁরাও যাবেন কোথায়? এটার স্থায়ী সমাধানে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ খুব জরুরি। বিষয়টি নিয়ে সিডিএ, সিটি করপোরেশন ও বন্দরকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বডুয়া বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানের অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল সড়কটি। যান চলাচলের জন্য এটি পুরোপুরি খুলে দেওয়া হলে নগরের যানজট অনেকাংশ কমবে। একই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও করতে হবে। এখনই যদি এটি অবৈধ পার্কিংয়ের দখলে চলে যায়, তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে রিং রোড করলেও কোনো সুফল মিলবে না।’
চউক সূত্র জানায়, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের ওপর এই আউটার রিং রোড নির্মাণের জন্য ২০০৫ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু করে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকা। দুই বছর যাচাই কাজ শেষ করে এই প্রকল্পে অর্থের জোগান দিতে সম্মত হয় তারা। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাইকার চুক্তি হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ ধরা হয়েছিল ৮৬৫ কোটি ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে দুই দফা সংশোধন করে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২ হাজার ৩২ কোটি ৪০ লাখ ৯২ হাজার টাকা। জাইকা অর্থায়ন করছে ৬৪৩ কোটি টাকা। আউটার রিং রোড নির্মাণে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও ভারতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান কেএনআর লিমিটেড।
সূত্র: সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।