মোস্তাক আহমেদ : রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকাগুলোতে রোডের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। কোথাও কোথাও ফুটপাত ছাড়িয়ে মূল সড়কের ওপর বসে গেছে পণ্যের পসরা। বছরের পর বছর এ রকম চললেও এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। অবৈধভাবে ফুটপাত দখলে থাকায় চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। পথচারীদের নাগরিক অধিকার ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। অনেক ক্ষেত্রে পথচারীদের বাধ্য হয়ে হাঁটতে হয় মূল সড়ক দিয়ে। যার ফলে অনেক সময় ঘটে যায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
রাজধানীর প্রায় সব এলাকার সড়কের ফুটপাতই ভ্রাম্যমাণ হকারদের হাঁকডাকে সরগরম থাকে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ফুটপাত দখল করে দেওয়া হয়েছে খাবার হোটেল, ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, জুতার দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যের দোকান। কিছু কিছু জায়গায় যাত্রীছাউনি বানানো হলেও সেগুলোও দখল হয়ে আছে।
প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কম পুঁজির কিছু মানুষ এই ফুটপাতের হাঁটার জায়গায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে কোনো রকম তোয়াক্কা না করেই ফুটপাত বন্ধ করে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এই শহরে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে দোকান বসানো যেন একটি সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হকারদের দখলে থাকা ফুটপাতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা।
ইচ্ছেমতো যে যার মতো করে বিভিন্ন পণ্যের দোকানপাট বসিয়ে জনগণের চলাচলে সমস্যা তো করছেই তার সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বিশাল যানজটের। আর দখলদারদের এই দখলে স্থানীয় রাজনৈতিক, প্রভাবশালীদের হাত থাকায় সহজেই কেউ কিছু বলতে পারছে না। অনেক সময় প্রশাসনের কিছু ব্যক্তির আইন প্রয়োগে অনীহা ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্থায়ীভাবে ফুটপাত দখল হয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।
তীব্র যানজটের শহর ঢাকায় যানজট থেকে রেহাই পেতে অফিসগামী চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করেও এই ফুটপাত বন্ধ করে রাখায় সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। বেদখল হওয়া পথে পথচারীরা ফুটপাত সহজভাবে ব্যবহার করতে না পেরে অস্বস্তিতে পড়ছেন প্রায়ই।
বেদখল সড়ক-ফুটপাতে পথ চলতে পথচারীর যন্ত্রণাময়-নাভিশ্বাস যেন নিত্যসঙ্গী। যে যার ইচ্ছামতো ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবহার করছে, কেউ আবার অনেক এলাকায় নির্মাণসামগ্রী মাসের পর মাস ফেলে রেখে সমস্যার সৃষ্টি করছে। ইট ভাঙার মেশিন, রড ট্রাক, বাস, প্রাইভেট গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনও এই সড়ক-মহাসড়কের একটা অংশ বন্ধ করে ফেলে রাখা হয়। শহরে যানজটের একটা বড় কারণ, এই যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং আর ফুটপাত দখল করে স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান নির্মাণ।
জনসচেতনতা বাড়াতে সিটি করপোরেশনকে আরও নতুন পন্থা গ্রহণ করে নিয়মিত ফুটপাত থেকে অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করাও সময়ের দাবি। পুলিশ প্রশাসন এ ক্ষেত্রে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করলে বেশি কাজে আসতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতি মুক্ত সড়ক ব্যবস্থাপনা ও হকারদের আলাদা জায়গায় স্থানান্তর পথচারীদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। শহরগুলোতে সড়ক অবকাঠামোর আধুনিকায়ন ও গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা দূর করে যানজট কমানোর সঙ্গেই ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীর বিড়ম্বনা লাঘবে সিটি করপোরেশন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে এবং তাদেরই সুন্দর ও আদর্শ মহানগর উপহার দিতে হবে।
ফুটপাত যেহেতু হেঁটে চলাচলের জন্যই তাহলে শুধু পথচারীরাই ব্যবহার করবে, আর এটা তাদের নাগরিক অধিকার এই মানসিকতা গড়ে তোলাও জরুরি। জনগণের দাবি দখলমুক্ত ফুটপাত, যানজটমুক্ত শহর, পরিচ্ছন্ন নগরী।
লেখক: সাংবাদিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।