তাকী জোবায়ের: বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদোন্নতির সর্বশেষ নীতিমালা নিয়ে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে নবম (সহকারী পরিচালক) ও দশম (কর্মকর্তা) গ্রেডে প্রবেশন কর্মকর্তাদের মাঝে।
কারণ, নতুন নীতিমালায় পদোন্নতির জন্য প্যানেল ভুক্তির ক্ষেত্রে চাকরিকাল ২ বছরের পরিবর্তে ৫ বছর করা হয়েছে। এতে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, দশম ও নবম গ্রেডের প্রবেশন পদের কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ যুগ্ম পরিচালক পদের ওপরে প্রমোশনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।
নতুন এই নীতিমালা দেশের সংবিধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান পদোন্নতি নীতিমালা ও ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস’ মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৪২৫তম সভায় ৯ম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডভুক্ত পদে পদোন্নতির নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গভর্নরকে অন্ধকারে রেখেই একজন প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর প্রভাব খাটিয়ে এই নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে পরিচালনা পর্ষদকে প্রভাবিত করেছেন বলে জোরালো অভিযোগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালায় কর্মকর্তা বা সমমান পদ হতে সহকারী পরিচালক বা সমমান এবং সহকারী পরিচালক পদ থেকে উপপরিচালক বা সমমান পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম চাকুরিকাল ধরা হয়েছে ৫ বছর। নতুন নীতিমালার আগে এসব কর্মকর্তার পরবর্তী পদে প্যানেল ভুক্তির জন্য আড়াই বছর (দুই প্যানেল বা দুই এসিআর সমমান) লাগত।
সেই সুবাদে ২০১৯ সালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আড়াই বছরে পরবর্তী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সেই হিসাবে পরবর্তী ব্যাচের প্রবেশন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও নতুন নীতিমালার কারণে তাদের প্যানেল ভুক্তি হতে আরও প্রায় ৩ বছর দেরি হবে।
সংবিধানের ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকিবে।’ আবার ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস’ মানদন্ড অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের সাথে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।
একইবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালার ১৭নং বিধিতে বলা হয়েছে, পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে এবং শূন্যপদ পূরণ আবশ্যক হলে ফিডার পদের কর্মকর্তাকে ন্যূনতম ৩ বছর চাকরি করা সাপেক্ষে চলতি দায়িত্ব দেয়া যাবে। আর সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির কোটা ১:১ অনুসরণ করেই শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। কিন্তু সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তা পদে ন্যূনতম চাকুরিকাল ৫ বছর নির্ধারণ করায় ৭০০টিরও বেশি সহকারী পরিচালক পদ দীর্ঘকাল শূন্য থাকবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী, ‘কোন কর্মচারী সাধারণত যেই আইনে নিয়োগ পান তিনি সেই বিধি মোতাবেক পদোন্নতি পাবেন।’ কিন্তু নতুন পদোন্নতি নীতিমালায় আপিল বিভাগের রায়কে অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অথচ চলতি বছরের এপ্রিলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজিএ) কর্তৃপক্ষ ‘নন-গেজেটেড এ্যামপ্লয়িজ রিক্রটমেন্ট রুলস-১৯৮৩ বাতিল করে ২০২৩ সালের একটি নিয়োগ বিধিমালা জারি করলেও আপিল বিভাগের রায় মেনে আগের আইনে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতিতে পূর্বের নিয়ম চালু রেখেছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুমবাংলাকে বলেন, প্রবেশন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সাধারণত দুই থেকে আড়াই বছর লাগে। কম সময় বিবেচনায় বুয়েট ও আইবিএ’র মত স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মেধাবীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বা সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। কিন্তু পদোন্নতির নতুন শর্তে আমরা ক্ষুব্দ ও হতাশ। এ অবস্থায় আগামীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মেধাবীর মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
পদোন্নতির নতুন নীতিমালা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. আবুল বশর জুমবাংলাকে বলেন, ‘নিয়ম মেনেই নীতিমালা করা হয়েছে। গভর্নরের নেতৃত্বে সব দিব বিবেচনায় নিয়েই করা হয়েছে এই নীতিমালা।’
তবে নতুন নীতিমালায় বৈষম্য হচ্ছে কি না সে বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।