ধর্ম ডেস্ক : লোহা অত্যন্ত শক্তিশালী ধাতু। এর আরবি হলো, ‘হাদিদ’। পবিত্র কোরআনে ‘হাদিদ’ নামে একটি সুরা আছে। সেই সুরায় মহান আল্লাহ লোহার রহস্য উন্মোচন করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি আরো নাজিল করেছি লোহা, তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ আছে। ’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২৫)
উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ লোহার দুটি রহস্য উন্মোচন করেছেন। এক. উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি আরো নাজিল (অবতীর্ণ) করেছি লোহা’ অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে নাজিল করেছি। সুতরাং এর উৎস মহাজাতিক।
বর্তমানে বিজ্ঞানের কল্যাণে পবিত্র কোরআনের এই তথ্যটি মানুষের জন্য বোঝা আরো অনেক সহজ হয়েছে। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে কেলভি ইনস্টিটিউট অব পার্টিক্যাল এস্ট্রোফিজিকস অ্যান্ড কসমোলজি (কেআইপিএসি) এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির যৌথ গবেষণায় উঠে আসে, প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর আগে ক্লাস্টার গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে ভয়ানক সংঘর্ষের ফলে লোহা সব গ্যালাক্সির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞানীরা জানান, জাপান-আমেরিকার যৌথ স্যাটেলাইট ‘সুজাকু’তে বসানো ৮৪ সেট এক্স-রে টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত ইমেজ বিশ্লেষণে এই তথ্য পান তাঁরা। ২৫০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গ্যালাক্সিসমূহের পর্যবেক্ষণ থেকে তারা দেখতে পান কিভাবে লোহা মহাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ১০-১২ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রসমূহের ভয়াবহ সংঘর্ষের ফলে হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলিক কনিকার সৃষ্টি হয়েছিল, যার মধ্যে লোহার পরমাণু ছিল অন্যতম।
সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি, যা এসব মৌলিক কণিকা সৃষ্টির জন্য দ্বায়ী। ক্লাস্টার গ্যালাক্সিসমূহে মোট লোহার পরিমাণ ছিল ৫০ বিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান। এরপর এসব লোহার পরমানূসমূহ একে অন্যের সঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি করতে থাকে বড় বড় লৌহ খণ্ড যা পরবর্তীকালে গ্যালাক্সিসমূহের মধ্যে ঘুরতে থাকে এবং লৌহ গ্রহ তৈরি করে, যারা পরবর্তীকালে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষ থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন সাইজের উল্কাপিণ্ড, যার বেশির ভাগ অংশই লোহা ও নিকেল। (গবেষণা বিষয়ক জার্নাল, আরডিওয়ার্ল্ড অনলাইন ডটকম)
উল্লিখিত আয়াতের দ্বিতীয় অংশে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তাতে প্রচণ্ড শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ আছে। ’ যুগ যুগ ধরে মানুষ এই শক্তিশালী পদার্থ থেকে বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়ে আসছে। পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে জুলকারনাইন বাদশা ইয়াজুজ মাজুজের প্রবেশদার মজবুত লোহার পাত দ্বারা প্রাচীর করে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। (সূত্র : সুরা কাহফ, আয়াত : ৯৪-৯৬)
মহান আল্লাহ তাঁর একজন নবীকে মুজিজাস্বরূপ লোহার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তাঁর হাতে লোহা মোমের মতো নরম হয়ে যেত। তিনি তা দ্বারা সে যুগের অত্যাধুনিক বর্ম ইত্যাদি তৈরি করতেন।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আমার পক্ষ থেকে দাউদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করেছিলাম) হে পর্বতমালা, তোমরা দাউদের সঙ্গে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করো, আর পাখীদেরকেও (এ আদেশ করেছিলাম)। আমি লোহাকে তার জন্য নরম করেছিলাম। ’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ১০)
বর্তমান যুগেও আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারে লোহার ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। পরকালেও অবিশ্বাসীদের লোহার হাতুড়ি দ্বারা কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এরা দুটি বিবদমান পক্ষ, যারা তাদের রব সম্পর্কে বিতর্ক করে। তবে যারা কুফরি করে তাদের জন্য আগুনের পোশাক প্রস্তুত করা হয়েছে। তাদের মাথার ওপর থেকে ঢেলে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি। যার দ্বারা তাদের পেটের অভ্যন্তরে যা কিছু আছে তা ও তাদের চামড়াসমূহ বিগলিত করা হবে। আর তাদের জন্য থাকবে লোহার হাতুড়ি। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ১৯-২১)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।