পরজীবীর দল ভালো না খারাপ? হয়তো ভাবছেন, এ আবার কোনো প্রশ্ন হলো নাকি? পরজীবী মানে, পরের ওপর নির্ভরশীল যার জীবন যাপন। ও জিনিস নিশ্চয়ই কোনোভাবে ভালো হতে পারে না। এর উদাহরণও ভুরি ভুরি। মাথায় উকুন বা ছারপোকা—নাম শুনেই হয়তো কুঁচকে গেছে আপনার মুখ। সাক্ষাৎ দুঃস্বপ্ন যাকে বলে!
পৃথিবীর অন্যতম বহুল বিস্তৃত পরজীবীর বৈজ্ঞানিক নাম টোক্সোপ্লাজমা গন্ডি (Toxoplasma gondii)। প্রতি তিনজন মানুষের একজনকে আক্রমণ করে এটি। তবে এর মূল পোষক বিড়াল। বিশেষ করে ঘরে যেসব বিড়াল পোষা হয়, সেগুলো এ পরজীবীতে আক্রান্ত হয়। তাদের মলের মাধ্যমে এটি আরও ছড়িয়ে পড়ে।
এ পরজীবীতে আক্রান্ত মানবদেহে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে সিরিয়াস অবস্থা হয়ে গেলে কোনো অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে, হবু মায়েদের গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়াও দেখা যায় অকারণে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা, মানসিক কিছু সমস্যাও দেখা যায় মাঝেমধ্যে। এমনকি এ পরজীবী আক্রান্তদের তুলনামূলক বেশি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়তেও দেখা গেছে।
অথচ এদেরও রয়েছে উপকারিতা। টোক্সোপ্লাজমায় আক্রান্তদের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতার ফলে দেখা গেছে, তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও সম্ভাবনা বেশি। দেখা গেছে, যে দেশে এ পরজীবীতে আক্রান্ত মানুষ বেশি, তাদের নতুন ব্যবসা বা উদ্যোগে ব্যর্থ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা কম। অনেক ক্ষেত্রে তাদের এ জন্য ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এ ছাড়াও দেখা গেছে, যে বাস্তুতন্ত্রে পরজীবী বেশি, সেগুলো বেশি স্বাস্থ্যকর (Healthy)। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সেখানকার বাস্তুতন্ত্রে বেশির ভাগ বড় শিকারী প্রাণীর চেয়ে পরজীবীর মোট ভর (Biomass) বেশি। বিশেষ করে সেখানে ট্রেমাটোডের মোট ভর পাখি, মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতি দেখে বেশি।
এরকম আরও বহু উপকারিতা রয়েছে পরজীবীদের। তবে এরা যেহেতু প্রচুর ক্ষতি করে, এদের কারণে অ্যালার্জি হয়, কষ্টে ভোগে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী, তাই এদের ব্যাপারে বেশির ভাগ মানুষের চিন্তাধারাই একদম ইতিবাচক নয়। সে কারণেই ধীরে ধীরে এরা বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছে। ২০২০ সালে পরজীবী সংরক্ষণের জন্য একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। তবে তাতে এখন পর্যন্ত কতটা ইতিবাচক কাজ হয়েছে, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর অনেক প্রাণীই আমাদের বাস্তুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। হয়তো মনে হতে পারে, সব সাপ বা পরজীবীকে মেরে ফেললে দুনিয়া ভালো থাকবে। আসলে তা নয়। সে ক্ষেত্রে নষ্ট হয়ে যাবে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য। তখন আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীটা আর সুন্দর থাকবে না। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।