মহসিন আলী, খবর ইউএনবি: যশোরের চৌগাছায় একই পরিবারে সাত বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সদস্য নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ঋষি সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র নারী সরলা দেবী।
জানা যায়, চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ঋষিপাড়ার বাসিন্দা নিরঞ্জনের স্ত্রী সরলা বালা। শহরের মেইন বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০০ মিটার দূরত্বে পাকা সড়কের পাশেই সামান্য জমির ওপর কাঁচা-পাকা ঝুপড়ি ঘরে সপরিবারে থাকেন তিনি। হতদরিদ্র সরলার জীবন চলে ছাগল, বকরি প্রজনেন মাধ্যমে। একসময় বেশ কয়েকটি পাঠা থাকলেও এখন মাত্র দুটি পাঠা আছে তার।
স্বামী নিরঞ্জন করিমন (ইঞ্জিন চালিত স্থানীয় বাহন) চালাতেন। কিন্তু স্ট্রোকের পর পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় বছর তিনেক হলো কোনোরকমে চলতে-ফিরতে পারেন। সরলার চার ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে মহন (১৯), জমজ ছেলে মিলন ও নয়ন (১৫) তিনজনই শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। পাঁচ মেয়ের মধ্যে বড় অম্বালিকা (৩৫) শিশুকালে হামজ্বরে আক্রান্ত হয়ে এখন দৃষ্টিশক্তিহীন। সেজো মেয়ের দুই ছেলে বিদ্যুৎ (১৪) ও বিধান (১২) বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাদেরও নেই থাকার কোন জায়গা। সরলার বাড়িতেই থাকে তারা।
সরলা দেবী বলেন, বিয়ের পর আমার পরিবার-পরিকল্পনার বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না। আমার স্বামী নিরঞ্জনও এসব নিয়ে ভাবতেন না। আমার একে একে সাত সন্তান জন্ম নেয়, এর মধ্যে একটি শিশু ছোটবেলাতেই মারা যায়। বড় ছেলে মদন তার স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকে। করিমন চালিয়ে নিজের সংসার চালায়।
‘বড় মেয়ে অম্বালিকা আমার সঙ্গেই থাকে। অন্য মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। তাদের মতো তারা কোনোরকমে কাজ করে চলে। সেজো মেয়ের দুই ছেলেও বুদ্ধি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওদের কোনো জমি নেই,’ যোগ করেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের ভুলেই তার পরিবারের সদস্যদের আজ এই অবস্থা। চিকিৎসকের ভুলের মাশুল হিসেবে তাকে এখন পরিবারের প্রতিবন্ধী সদস্যদের বোঝা বয়ে নিতে হচ্ছে।
সরলা জানান, তাদের পরিবারের সাত প্রতিবন্ধীর মধ্যে বড় মেয়ে অম্বালিকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। আর স্বামী নিরঞ্জনকেও একটা কার্ড দিয়েছে কাউন্সিলর।
এ ব্যাপারে চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান বলেন, ওই পরিবারের বড় মেয়ে ও তার বাবাকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড অপ্রতুল হওয়ায় তাদের সবার ভাতা দেয়া যাচ্ছে না। একই পরিবারের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা হলেই কেবল তাদের সবাইকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে চৌগাছা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নির্মল কান্তি কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে কোন পরিবারে শতভাগ প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা নেই। ২০১৬ সালে একটি এনজিওর মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর একটি প্রতিশ্রুতি আছে দেশের শতভাগ প্রতিবন্ধীদের ভাতার আওতায় আনা হবে। সেটি হলেই কেবল ওই পরিবারের সবাইকে ভাতা দেয়া সম্ভব হবে।’ সূত্র: ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।