জুমবাংলা ডেস্ক : একটি বিষয়ের পরীক্ষায় অংশই নেয়নি দুই শিক্ষার্থী। অথচ সে বিষয়েই তারা পেল জিপিএ-৫। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এমনই চাঞ্চল্যকর ঘটনার তথ্য মিলেছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তারা বিষয়টি ‘বোর্ড কর্মকর্তাদের গাফিলতি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন বলে জাগো নিউজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২০২৩ সালের এসএসসিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের মূল পরীক্ষায় দুই শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, দুজনেই তাদের ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্র (বাঁশখালী-০১) থেকে নম্বরপত্র পাঠানো হয়। একই ভাবে অনুপস্থিত দুই শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র জমা না হওয়া সত্ত্বেও তত্ত্বীয় (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষায়ও সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে তাদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দেন বোর্ড পরীক্ষকরা।
বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই দুই শিক্ষার্থীর পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। সোমবার (১০ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম ফলাফলে গড়বড় হওয়ার তথ্যটি গণমাধ্যেমকে জানিয়েছেন।
বোর্ড চেয়ারম্যানের ভাষ্য, পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে দুই শিক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনায় পরীক্ষা কেন্দ্র ও আমাদের বোর্ড কর্মকর্তাদের গাফিলতি রয়েছে। মূল পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলেও ওই দুই শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর পাঠানো হয় স্থানীয় পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে। এ অবস্থায় বোর্ড পরীক্ষকরা বিষয়টি যাচাই না করে তত্ত্বীয় (নৈর্ব্যক্তিক) পরীক্ষায়ও তাদের জিপিএ-৫ পাইয়ে দিয়েছেন।
তবে বিষয়টি জানার পর কেন্দ্র সচিব ও বোর্ড পরীক্ষকদের সঙ্গে কথা বলছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, আমরা কেন্দ্র সচিব ও বোর্ড পরীক্ষকদের সঙ্গে বসেছি। শিক্ষা বোর্ডের নিজস্ব কাঠামোয় পুরো ঘটনা তদন্ত করছি। একটি বিষয় জানতে গিয়ে আমরা আরও বেশ কিছু বিষয় জেনেছি, যা পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতির অনেক দুর্বলতা সামনে নিয়ে এসেছে। সব বিষয়ে এখনই বলতে চাইছি না।
‘পুরো বিষয়টিতে যে বা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ‘দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১’ অনুযায়ী বোর্ড নিজে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে’বলে জানিয়েছেন তিনি।
উত্তরপত্র জমা না হওয়া সত্ত্বেও নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় ওই দুই শিক্ষার্থী কীভাবে নম্বর পেল তা জানতে গত দুদিন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর এ এম এম মুজিবুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ফোনে না পেয়ে সোমবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে যান এ প্রতিবেদক। এ সময় তিনি নিজ কক্ষে অবস্থান করলেও সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দীর্ঘসময় অপেক্ষায় রেখেও কথা বলতে রাজি হননি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। মাধ্যমিকে আইসিটি বিষয়ে নৈর্ব্যক্তিক ও ব্যবহারিকে ২৫ নম্বর করে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই বিষয়ের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা ছিল। ৩০ মিনিটের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় কেন্দ্রেই উপস্থিত হয়নি দুই শিক্ষার্থী। অথচ গত ১২ জুন প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলে দেখানো হয়, তারা দুজনই আইসিটি বিষয়ের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে।
জানতে চাইলে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব রতন চক্রবর্তী বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার দিন ওই দুই শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তারা সেদিন কেন্দ্রেও আসেনি। আমরা দুই শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির তথ্য পরীক্ষার দিনই বোর্ডে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী কীভাবে জিপিএ-৫ পেল তা বুঝতে পারছি না।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার দিন ওই দুই শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তারা সেদিন কেন্দ্রেও আসেনি। আমরা দুই শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির তথ্য পরীক্ষার দিনই বোর্ডে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া ওই দুই শিক্ষার্থী কীভাবে জিপিএ-৫ পেল তা বুঝতে পারছি না।- কেন্দ্র সচিব
কেন্দ্র থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বর কারা পাঠালেন- এ প্রশ্নে কেন্দ্র সচিব বলেন, আসলে আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের ব্যবহারিক পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় না। স্কুলে জমা দেওয়া ব্যবহারিক খাতার ওপর মূল্যায়ন করে সেখানে নম্বর দেওয়া হয়। এসব পরীক্ষার নম্বরপত্র আগেই পাঠানো হয়।
তবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর রেজাউল করিম বলেন, তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আগে ব্যবহারিক পরীক্ষার নম্বরপত্র পাঠানোর সুযোগ নেই। তত্ত্বীয় পরীক্ষার পরই ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, পরীক্ষার রুটিনে সেই সূচিও থাকে। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতেই ব্যবহারিকে নম্বর দিতে হবে।
মূল্যায়ন পদ্ধতির এই হেরফের নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা বোর্ডগুলো কে কত বেশি পাসের হার দেখাতে পারে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকে। তাদের প্রকাশিত ফলাফলের ওপর আস্থার সংকট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের সংখ্যা দেখেই সেটা বোঝা যায়।
‘শিক্ষা বোর্ডসহ সর্বত্র নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনীতিকীকরণের ফলে দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে। বাঁশখালীর ঘটনা এরই ধারাবাহিকতার কফিনে শেষ পেরেক’- যোগ করেন অ্যাডভোকেট চৌধুরী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।