এসএসসি ও এইচএসসির মতো পাবলিক পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থী। কেউ কেউ চরম হতাশায় এমনকি বেছে নিচ্ছে আত্মহননের মতো ভয়াবহ পথ। প্রতি বছর পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরই সারাদেশে দেখা যায় এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য, আর সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রবণতা আরও বাড়ছে।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খারাপ ফল করলে বা কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়লে সবাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় না। যারা এ পথে পা বাড়ায়, তারা আসলে ‘রিস্ক গ্রুপে’ থাকে— অর্থাৎ, আগে থেকেই মানসিকভাবে অস্থির বা আবেগপ্রবণ। এই শিক্ষার্থীরা আবেগের বশে ধ্বংসাত্মক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় বাবা-মা, পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকদের সচেতন ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু ও কিশোর মনোরোগবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাদিয়া আফরিন বলেন,
“পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা ভেঙে পড়লে বাবা-মাকে সন্তানের মানসিক অবস্থার দিকে নজর দিতে হবে। তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। তবেই এ ধরনের আত্মহননের প্রবণতা কমে আসবে।”
তিনি আরও বলেন, স্কুলে শিক্ষার্থীদের শুধু পড়াশোনা নয়, ইমোশনাল ও সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের সুযোগও তৈরি করতে হবে। এজন্য স্কুলে মেন্টাল কাউন্সেলর থাকা এবং শিক্ষকদের মনোবিজ্ঞান বা আচরণবিজ্ঞান বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি।
“তাহলে কোনো শিক্ষার্থী মানসিক কষ্টে পড়লে, সে প্রথমেই কাউন্সেলর বা শিক্ষক— এমন একজন বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্কের কাছে সাহায্য চাইতে পারবে,” বলেন ডা. সাদিয়া আফরিন। “এতে তার মানসিক চাপ ও একাকিত্ব অনেকটাই কমে যায়।”
তিনি আরও বলেন, অনেক সময় শিক্ষার্থীরা মনে করে— ‘আমার বন্ধু পাস করেছে, আমি পারিনি’; এ ভাবনা থেকেই অপরাধবোধ বা লজ্জাবোধ তৈরি হয়। ফলে তারা সমাজের চোখে মুখ দেখাতে পারবে না— এই আতঙ্কে ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নেয়।
“ফলাফলের আগে ও পরে বাবা-মা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে। শিক্ষকদেরও অনুপ্রেরণামূলক কথা বলা উচিত,” বলেন তিনি।
“শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ বাড়াতে পারলে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।”
ডা. সাদিয়া আফরিন আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী মনে করে আমার বন্ধু বা বান্ধবী পাস করে গেছে বা ভালো ফল করে ফেলেছে; কিন্তু আমি পারলাম না। নিজের ওপরে একটা দায়বদ্ধতা অবচেতন মনে ভেবে ফেলে। সে হয়তো ভাববে কীভাবে সে সমাজে মুখ দেখাবে? এজন্য ফল প্রকাশের আগে ও পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে।
‘শিক্ষকদেরও অনুপ্রেরণামূলক কথা বলতে হবে। তাদের ইমোশনালি স্ট্রাগল বা সেলফ স্টিম বা আত্মবিশ্বাসের জায়গাগুলোতে নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে’ যোগ করেন এ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।