প্রদীপ মাহবুব: পরীমনি অপরাধী হয়ে থাকলে নিশ্চয়ই আইন তার বিচার করবে। কিন্তু বিনা মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়া পরীমনির বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করেছে। চার ঘন্টার অভিযান শেষে বলা হয়েছে বাসায় প্রচুর মাদক পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, মাদক তো বোট ক্লাবেও পাওয়া গিয়েছিলো। সেই বোট ক্লাবের কর্ণধার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কী ব্যবস্থা নিয়েছে? দেশে প্রতিটি বড় বড় আবাসিক হোটেল/মোটেল এবং ক্লাবে অনেকটা প্রকাশ্যেই মদ বিক্রি হয়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের অবস্থান কী?
পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বড় বড় ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ উপার্জন করেন। এবং এটা করার জন্য বাড়িতে মদের মিনি বার রেখেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, যেসকল ব্যবসায়ী এবং সরকারি কর্মকর্তারা পরীমনির মিনি বারে যেতেন তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কী? নৈতিক অধঃপতনের জন্য পরীমনির বাসায় আসা যাওয়া করা সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বরখাস্তের কোনো বিধান আছে কী? কিংবা ব্যবসায়ীদের নৈতিক স্খলনের কোনো বিচার কাছে কী? পরিবার কিংবা রাষ্ট্রের কাছে?
এদেশে অনেক মানুষেই মদ পান করেন। এবং এটা ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং রাজনীতিবিদদের কাছেও পান্তাভাতের মতো। রাষ্ট্র কী এসকল মানুষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে? মামলা/অভিযোগ /ওয়ারেন্ট ছাড়া বাসায় জোরপূর্বক ঢুকেছে?
দেশে অসংখ্য অনানুষ্ঠানিক পতিতালয় আছে। যেখানে হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা। একদিনে ১০-২০ মেয়ের কাছে শত শত পুরুষ যাতায়াত করে। কিন্তু দিনশেষে দোষ ঐ ১০/২০ টি মেয়ের। এই মেয়েগুলোকে কারা এ পথে নিয়ে এসেছে কিংবা কারা এই মেয়েগুলোর কাছে যায় সে ব্যাপারে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ বরাবরই উদাসীন। দিনশেষে দোষ মেয়েদের।
পরীমনিকে গালি দেয়া ছেলে/মেয়েটি তার প্রেমিকা/প্রেমিকের সাথে বিয়ের পূর্বেই শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে কোনো অন্যায় বোধ করেনা। এটা বৈধ। পরীমনি কোনো পুরুষের সাথে মেলামেশা করলে অন্যায়। পরীমনিকে গালি দেয়া প্রগতিশীল/প্রতিক্রিয়াশীল মানুষটির কাছে এ্যাঞ্জেলা জোলি, ঐশ্বরিয়া রায়, এবং ক্যাটরিনা কাইফ স্বপ্নের মডেল। এমনকি সানি লিওনের পর্ণ না দেখলে রাতের ঘুম হারাম হয়। কিংবা বাংলাদেশ প্রভার ভিডিও না দেখলে জীবন বৃথা। অথচ দিনশেষে তাদের কাছে বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের মেয়েরা স্রেফ বেশ্যা! অন্যকিছু নয়। এসবকিছু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শক্ত বহিঃপ্রকাশ।
পরীমনির অপরাধ তিনি ব্যবসায়ীকে চ্যালেঞ্জ ছু্ঁড়ে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা এটা তাদের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে নিয়েছেন। এবং তার যথাযথ ব্যবস্থা তারা নিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা দরিদ্রের রক্ত শোষণ করে টাকার পাহাড় জমায়। এটা অপরাধ নয়। দেশের ৮০ ভাগ অর্থনীতি ২০ ভাগ মানুষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আর ২০ ভাগ অর্থনীতি নিয়ে আমাদের মতো মানুষেরা কোনোরকম বেঁচে আছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার, কানাডায় বেগম পাড়ার আবির্ভাব কিংবা প্রকাশ্যে ঘুষ খাওয়ার কোনো শাস্তি নেই। এতেই বৈষম্য পরিষ্কার।
দিনশেষে ক্ষতিটা হয়েছে বাংলা চলচিত্রের। যে ক্ষতি আর কয়েক দশকে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। চলচিত্রে আর কোনো পরীর জন্ম যেনো না হয়। স্বেচ্ছায় কিংবা ভুলে।
সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো, প্রগতিশীল মানুষেরা যখন পরীমনিকে নিয়ে হাসিঠাট্টা ও বিদ্রুপ করছে। সেই বিদ্রুপের সাথে প্রগতিশীলতার খোলসধারী মেয়েদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া। সহযোগী অধ্যাপক, লোক প্রশাসন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।