জুমবাংলা ডেস্ক : জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়াম। তবু দমে যায়নি ১৬ বছরের এই কিশোর। অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বার বার। ছোটবেলা থেকে অভাবের মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে এখন সে এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই হাত নেই, তারপরও দমে যায়নি সে। পা দিয়ে লেখেই এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার হরখালী মুজিবুর রহমান আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে সে। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) শুরু হয় এসএসসি পরীক্ষা। শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্য পরীক্ষার্থীর চেয়ে ৩০ মিনিট বেশি সময় পাচ্ছে সিয়াম। তাকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল জাগো নিউজ।
সিয়ামের বাবার নাম জিন্নাহ মিয়া। তিনি একজন দিনমজুর। পরিবার নিয়ে উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের উদনাপাড়া গ্রামে থাকেন। ওই গ্রামের চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের মানবিক শাখা থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সিয়াম।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বড় বোন ও ভাই স্নাতক পাস করেছে। তাই সিয়ামের ইচ্ছা বড় হয়ে সে দেশের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করবে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে জোসনা বেগম ও জিন্নাহ মিয়া দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় সিয়াম। তখন থেকে তার দুই হাত না থাকায় বিপাকে পড়ে যায় পরিবার। তবে সিয়ামের অদম্য ইচ্ছা শক্তি দেখে ২০১৪ সালে বাড়ির পাশে উদনাপাড়া ব্র্যাক স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন মা-বাবা। চতুর্থ শ্রেণিতে ওঠার পর সিয়ামের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। অভাবের সংসারে তিন সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলেন না জিন্নাহ মিয়া।
এক বছর পড়াশোনা বন্ধ থাকার পর ব্র্যাক স্কুলের এক শিক্ষকের চেষ্টায় ২০১৮ সালে সিয়াম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেয়। এরপর চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে।
সিয়ামের বাবা জিন্নাহ মিয়া বলেন, অনেকে আমার ছেলেকে প্রতিবন্ধী মনে করলেও সে আমার সোনার টুকরা। সে পা দিয়েই সবকিছু করতে পারে। অন্যের বাড়ি কাজ করে তিন ছেলেমেয়েকে এ পর্যন্ত এনেছি। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলেও বড় ছেলে পড়ালেখা শেষ করে এখন চাকরি খুঁজছে। আমার ইচ্ছা ছোট ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করা।
মা জোসনা বেগম বলেন, অভাবের সংসারে ছেলেকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না। তবু ছেলে আমার রাগ না করে এ পর্যন্ত এসেছে।
এজন্য তিনি জাকিয়া নামে এক শিক্ষিকার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চাপারকোনা মহেশ চন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সিয়াম অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে একটু আলাদা। প্রবল ইচ্ছাশক্তি তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। একদিন সে মা-বাবার মুখ উজ্জ্বল করবে আশা করি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সিয়ামের এমন অদম্য ইচ্ছাশক্তির কথা শুনে তার বাড়ি ছুটে যান সরিষাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুশফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, সিয়ামের কথা শুনে আমি খুবই খুশি। তাকে এক নজর দেখার খুব ইচ্ছে জাগে। তাই তার বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলাম।
এ সময় ওসি সিয়ামের বাবা-মায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তার পড়াশোনার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সরিষাবাড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শারমিন আক্তার বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে সিয়ামের কথা শুনেছি। সিয়াম অনেক কষ্ট করে পা দিয়ে লেখে এ পর্যন্ত এসেছে। এজন্য সিয়াম ও তার পরিবারকে সহযোগিতা করা সবার দায়িত্ব।
এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিয়ামকে সাহায্য করা হবে বলে জানান ইউএনও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।