জুমবাংলা ডেস্ক : দুর্বল ইসলামী ব্যাংকগুলো যেভাবে লাইফ সাপোর্টে রয়েছে, সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নিলে প্রাকৃতিক নিয়মেই হারিয়ে যাওয়ার সম্ভবান রয়েছে। যে কারণে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে শক্তিশালী একটি ইসলামী ব্যাংক করার উদ্দ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর সংষ্কার ও পুনরুদ্ধার করতে ৮ থেকে ১০ দশ বছর সময় লাগতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। জনকণ্ঠের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন পাঁচ ইসলামী ব্যাংক একত্রিত করার সুফল ও করণীয় সম্পর্কে জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যাংক একত্রিত করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী জুলাই-আগস্ট থেকে শুরু করে অক্টোবর মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলো একত্রিত হলে সাময়িকভাবে তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দুর্বল ব্যাংকগুলো যেভাবে রয়েছে, তাদের যদি সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নিয়মেই ব্যাংকগুলো হারিয়ে যাবে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিনিয়োগকারীরা। তাই সরকারের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের এমডি শফিকুজ্জামান জানান, আমাদের ব্যাংকসহ অন্য ব্যাংকগুলো একীভূত হলে ভালোই হবে। তবে পরিপূর্ণতা পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর থেকে শুরু হলে টানা ৮ থেকে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, আমরা এতদিন চেষ্টা করেছি নিজেদের তহবিল থেকে খরচ চালাতে কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে সরকারের কাছে আমরা সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সহযোগিতা চেয়েছি।
তিনি জানান, একীভূতকরণের বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এই সাড়ে তিন মাসে ব্যাংকগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচটি টিম কাজ করবে। টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও যোগ্যলোক দেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এবং এসব ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের সঙ্গে বৈঠক করে একীভূতকরণের সাড়ে তিন মাসের রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে একীভূতকরণের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে কীভাবে একীভূতকরণ করা হবে, সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপ শেষে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই ব্যাংকগুলোর এমডিদের চুক্তি বাতিল হবে। আর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের বাছাই করা সদস্যসহ বিভিন্ন খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি পর্ষদ গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় ব্যাংকগুলো পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দেয়। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য আমানতকারীর আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাতে জঞ্জাল দূর করার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো। দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তি করা হবে ‘ব্যাংক রেজুল্যুশন অধ্যাদেশ-২০২৫’ অনুযায়ী। অবশ্য জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে কোনো ব্যাংক যদি সরকার থেকে নেওয়া বিশেষ ধারের টাকা ফেরত দিয়ে নিজেরা চলতে পারে তখন ওই ব্যাংক চাইলে একীভূতকরণ থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে।
বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, সমস্যাগ্রস্ত এই ৫টি ব্যাংকের মোট আমানত রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। যেখানে ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়, পাঁচটি ব্যাংক মিলে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক গঠন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য।
মালিকপক্ষের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে চরম দুরবস্থায় পড়লেও এসব ব্যাংকের আশার দিক হিসেবে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপশাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। যে কারণে কোনো ব্যাংক থেকে কাউকে ছাঁটাইয়ের দরকার হবে না। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ পাওয়াদের নতুন করে যোগ্যতা যাচাই করা হবে। আমানতকারীদের অর্থ ফেরতের জন্য ঋণ আদায় জোরদার এবং সরকার থেকে কয়েক ধাপে ব্যাংকগুলোকে টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া একই এলাকায় একাধিক শাখা থাকলে তা অন্য জায়গায় স্থানান্তর এবং কিছু শাখা বন্ধ করা হবে।
ইসলামিক ব্যাংকস কনসালটেটিভ ফোরাম এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান জানান, পাঁচটি ব্যাংক একত্রিত করে শক্তিশালী একটি ইসলামী ব্যাংক করা হবে। আমানতকারীর সুরক্ষা দেওয়া এ উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাংক খাতের জন্য যা ইতিবাচক।
জানা গেছে, প্রত্যেক আমানতকারীর অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা দিলেও অধ্যাদেশের আলোকে আগামী ১৫ অক্টোবরের পর প্রথমে এসব ব্যাংকের শেয়ার শূন্য করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সাময়িক সময়ের জন্য ব্যাংকগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো : সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও এক্সিম। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকও একীভূতকরণের আলোচনায় ছিল। তবে ব্যাংকটিতে বিদেশি মালিকানা থাকায় এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।