পাঁচ সন্তানকে হত্যাকারী পিতার প্রাণভিক্ষার আবেদন মায়ের

যুক্তরাষ্ট্রের এক মা আদালতের কাছে তার পাঁচ সন্তানের হত্যাকারী সাবেক স্বামীর প্রাণভিক্ষার আবেদন জানিয়েছেন।

বিবিসি জানিয়েছে, আম্বার কাইজার নামের ওই মা সাউথ ক্যারোলাইনার এক আদালতে বলেছেন, “টিম জোন্স জুনিয়র আমার সন্তানদের কোনো অনুকম্পা না দেখালেও আমার সন্তানরা তাকে ভালোবাসতো।”

২০১৪ সালের ২৮ অগাস্ট এক থেকে আট বছর বয়সী পাঁচ সন্তানকে হত্যার জন্য চলতি বছরের মে-তে দোষী সাব্যস্ত হন ৩৭ বছর বয়সী জোন্স। তাকে মৃত্যুদণ্ড না যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে বিচারকরা তা বিবেচনা করে দেখেছেন।

মঙ্গলবার আদালতে কাইজার বলেছেন, “আমার শিশুরা কী যন্ত্রণা সহ্য করেছে তা শুনেছি আমি। একজন মা হিসেবে যদি আমি ব্যক্তিগতভাবে ওর ‍মাথাটা কেটে নিতে পারতাম তাহলে তাই করতাম। আমরা ভিতরে যে মা আছে এটাই সে। এই অনুভূতিই সেই মা বহন করছে।”

জীবনের অধিকাংশ সময় ধরেই তিনি মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন কাইজার।

তিনি জানান, সময়ে সময়ে তার মনে হয় বিচার ব্যবস্থা তার সাবেক স্বামীকে ‘পুড়িয়ে’ ফেলুক, কিন্তু এমন মনে হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দেওয়ার বিষয়ে সায় দিতে পারছেন না তিনি।

“সে কোনোভাবেই আমার সন্তানদের কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখায়নি, কিন্তু আমার সন্তানরা তাকে ভালোবাসতো এবং আমি যদি আমার পক্ষ না হয়ে আমার সন্তানদের পক্ষ হয়ে কথা বলি, তাহলে আমি এটিই বলবো,” বলেন কাইজার।

তবে শেষপর্যন্ত আদালত যে সিদ্ধান্ত নিবে তিনি তার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন তিনি।

জোন্সের আইনজীবীর আহ্বানে আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাইজার এসব কথা বলেন।

২০০৪ সালে শিকাগো এলাকায় শিশুদের একটি ফান পার্কে কাজ করার সময় কাইজার ও জোন্সের পরিচয় হয়। পরিচয়ের ছয় সপ্তাহ পরই তারা বিয়ে করেন।

কিন্তু পরের দিকে জোন্স ধর্মের দিকে ঝুঁকে ‘নারীদের দেখা যাবে না, তাদের কণ্ঠ শোনা যাবে না’ ধরনের গোড়ামি শুরু করার পর তাদের দাম্পত্য জীবন তিক্ত হয়ে ওঠে বলে আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে জানিয়েছেন কাইজার।

নয় বছর দাম্পত্য জীবনের পর তারা বিচ্ছেদের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যান। কিন্তু ইন্টেলের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বছরে ৮০ হাজার ডলারের বেতন ও গাড়ি থাকায় সন্তানদের জোন্সের কাছে রাখার সিদ্ধান্ত হয়।

কাইজার প্রতি শনিবার একটি রেস্তোরাঁয় সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতেন।

আদালত জেনেছে, যেদিন সন্তানদের হত্যা করেন সেদিন জোন্স ছয় বছর বয়সী সন্তান নাথানকে বাড়িতে প্লাগ সকেট নিয়ে খেলতে দেখে ক্ষেপে যান। রাগের মাথায় তিনি শিশু বালকটিকে হত্যা করে এরপর অপর চার সন্তান, এলেইন (১), গ্যাব্রিয়েল (২), এলাইয়াস (৭) ও মেরাকে (৮) শ্বাসরোধ করে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

হত্যার পর সন্তানদের লাশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে নিজের এসইউভিতে নিয়ে নয় দিন গাড়ি চালিয়ে লাশের অবশিষ্টাংশগুলো আলবামার গ্রামাঞ্চলে ফেলে দেন। কিন্তু ফিরে আসার সময় মিসিসিপির একটি ট্র্যাফিক স্টপে তার গাড়ি থেকে বের হওয়া ‘মৃতের গন্ধ’ শনাক্ত করে তাকে গ্রেপ্তার করেন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে আদালতে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছেন জোন্স। তার আইনজীবীদের দাবি, ধরা পড়েনি এমন মানসিক রোগে ভুগছিলেন তিনি এবং তার মায়েরও এ রোগ ছিল।

আদালতে জোন্স দাবি করেছেন, তার স্ত্রী পাশের বাড়ির এক টিনএজারের জন্য তাকে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

Previous Article

ফেসবুক থাকবে না আর হুয়াওয়ে ফোনে

Next Article

ওয়ার্নারের সেঞ্চুরি, বড় সংগ্রহের পথে অস্ট্রেলিয়া

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *