জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একজন তরুণ ময়লা চাদর ও লুঙ্গি পরে মুখে কালি মেখে খালি পায়ে রাস্তায় নারীদের উত্ত্যক্ত করছেন। বিশেষ করে রাস্তায় চলাচলকারী কিশোরী–তরুণীদের থামিয়ে হিজাব পরতে বলছেন তিনি।
এই তরুণকে নিয়ে অসংখ্য ফেসবুক ব্যবহারকারী তাঁদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট করছেন। অনেকে নারীদের উত্ত্যক্ত করার কারণে তরুণকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
Mahdy Hasan Talha নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী গতকাল রবিবার (৯ মার্চ) রাত ১১টা ২৩ মিনিটে এই তরুণের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তরুণটিকে রাস্তায় একটি কিশোরীকে উদ্দেশ করে বলতে দেখা যায়, ‘আপনাকে হিজাব পরলে কিন্তু সুন্দর লাগবে।’ জবাবে কিশোরীটি নিজেকে হিন্দু পরিচয় দিলে তরুণটি বলেন, ‘হিন্দু হয়েছে এজন্য কি মানুষকে দেখানো লাগবে বলো!’
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, ‘এই ছেলেটি পাগল সেজে রাস্তায় মেয়েদের হিজাবের নামে হ্যারেস ও টিজ করছে এবং সেসব ভিডিও ফেসবুকে ছাড়ছে। এমনকি হিন্দু ছোট বাচ্চাকেও হিজাব পরতে বলছে। এর জ্বালায় রাস্তায় হাঁটতে চরম বিরক্ত মেয়েরা। এই লোকটাকে আইনের আওতায় আনা হোক।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Campus Connect 2.0 নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে Atif Ahmed Hasiv নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে একটি পোস্টে তরুণটির ছবি প্রকাশ করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘মাত্র কয়েকদিন আগেই ওড়না কান্ড কে কেন্দ্র করে সারাদেশে তুলপার গেছে। আছিয়া সহ বিভিন্ন ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে আন্দোলন প্রতিবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন অর্নবের উত্থান দেখা গেছে, এই লোক রাস্তায় পাগল সেজে মেয়েদের হ্যারাস করে বেড়ায়, ধর্মের নামে নিজেই বেগানা নারীদের গিয়ে হেরেজ কইরা বেড়ায় আর ভিডিও বানায় অনুমতি ছাড়া তাও ভুয়া পাগল সেজে। কিন্তু আদতে সে সুস্থ। দেশে আরেকটা ওড়না কান্ডের মতো তুলপার করা কোন ঘটনা দেখতে না চাইলে এই হ্যারাস কারীকে এক্ষুণি গ্রেফতার করুন #bdpolice।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Russell Hemadrir নামে অ্যাকাউন্ট থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ১ মিনিটে একসঙ্গে কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়েছে, ‘Khalid Mahmud Hridoy Khan এর বাসা সাভার। কেউ পর্দা করা ছাড়া বাহিরে বের হলে তাকে ধ র্ষ ন করা যাবে বলে ভিডিয়ো বানায়। এই ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কলেজ, ইউনির মেয়েদেরকে টিজ করে, হেনস্তা করে। রাস্তায় বয়স্ক মহিলারা চলতে পারে না। একে আইনের আওতায় আনুন।’ (বানান অপরিবর্তিত)
Justice For Students নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে দেওয়া একটি পোস্টে জানানো হয়, ভিডিওতে থাকা তরুণের নাম খালিদ মাহমুদ হৃদয় খান (Khalid Mahmud Hredoy Khan)। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘Khalid mahmud hredoy khan নামের একটি পেইজ থেকে এই শয়-তান প্রতিনিয়ত এইসব ভিডিও পোস্ট করে। সে রাস্তায় চলাচল করা মেয়েদের নিয়ে ভিডিও বানায় স্কুল পড়ুয়া মেয়েদের ভিডিও বানায় পাগল সেজে। নিচে (Muslim help bd) লিখে প্রতিনিয়ত ইসলামকে ছোট করছে এই বদ-মাশ ওরে দ্রুত আইনের হাতে তুলে দেন ইসলামকে ছোট করছে মুসলিমকে ছোট করছে সে। তার ভিডিও মোটেও শিক্ষা মূলক নয় উল্টো মেয়েদের হয়রানি করতে দেখা যায়।’ (বানান অপরিবর্তিত)
এসব তথ্যসূত্রে ফেসবুকে সার্চ করে ‘Khalid Mahmud Hridoy Khan (Muslim Help BD)’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়।
(৫৮ হাজার ফলোয়ারের ফেসবুক পেজটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ওই তরুণ একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। পেজটির ট্রান্সপারেন্সি অপশন থেকে জানা যায়, এই পেজটি ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ ‘সাথী আক্তার’ নামে খোলা হয়। পেজটির এখন পর্যন্ত তিনবার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৮ জুনে সাথী আক্তার থেকে নাম পরিবর্তন করে ‘Amazing 1 M’ করা হয়। আর সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৩ আগস্টে নাম পরিবর্তন করে ‘Khalid Mahmud Hridoy Khan’ করা হয়। পেজটিতে মোট চার জন অ্যাডমিন আছেন। তিন জনের অবস্থান বাংলাদেশ এবং একজনের অবস্থান সৌদি আরব বলে উল্লেখ রয়েছে।
Khalid Mahmud Hridoy Khan নামে এই পেজে ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে সর্বপ্রথম ভিডিও আপলোড করা হয়। এটি ছিল একটি ট্রাভেল ভ্লগ।
ময়লা চাদর ও লুঙ্গি পরে মুখে কালি মেখে পাগলের বেশে সর্বপ্রথম ভিডিও আপলোড দেওয়া হয় ২০২৪ সালের ৯ মার্চ।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে (১,২, ৩) চাদর পরে এই পেজ থেকে ভিডিও আপলড করা হয়েছে।
তবে নারীদের হিজাব পরার পরামর্শ বিষয়ে Khalid Mahmud Hridoy Khan পেজে গত ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বপ্রথম ভিডিও আপলোড করা হয়।
তবে সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া হিজাব বিষয়ক ভিডিওগুলো এই পেজে পাওয়া যায়নি।
এই পেজটির বেশিরভাগ ভিডিও প্র্যাঙ্ক। বৃদ্ধ ভিক্ষুক, দোকানদার, পথচারীসহ বয়স্ক ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি প্রাঙ্ক করেন। কিশোরীদের উত্ত্যক্ত করার ভিডিও–ও রয়েছে। ভিডিও শিরোনাম ও বর্ণনায় তিনি এগুলোর মাধ্যমে ধর্মীয় বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেছেন।
পেজটিতে ভিডিওগুলোর মন্তব্যের ঘরে অনেকেই অনেকেই তাঁর বর্তমান অবস্থান জানতে চেয়ে মন্তব্য করেছেন। তাঁর বাসা ঢাকার সাভারে উল্লেখ করে অনেকে এসব কমেন্টসহ ও আলাদাভাবে পোস্ট করেছেন।
মো. রিফাত মেহেদী জানান, খালিদ মাহমুদ হৃদয় খানের ফেসবুক পেজের ভিডিওগুলো সাভারের নবীনগর, পল্লী বিদ্যুৎ, স্মৃতিসৌধও ও স্মৃতিসৌধের আশপাশের এলাকায় ধারণ করা। ধারণা করা যেতে পারে তাঁর বাসা এদিকেই।
এই তরুণের বিষয়ে জানতে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, খালিদ মাহমুদ হৃদয় খান সাভারেই থাকেন। তবে তাঁর কনটেন্টগুলো সাভার এলাকা, চিড়িয়াখানাসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তৈরি করা।’
আজ সোমবার (১০ মার্চ) বিকেল ৪টা ১৬ মিনিটে খালিদ মাহমুদ হৃদয় খান নামের পেজটিতে একটি রিলস ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই ভিডিওতে তরুণটি বলছেন, তিনি আজকেই থানায় যাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।