জুমবাংলা ডেস্ক : পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সহজশর্তে সুযোগ দিলেও তাতে লাভ হয়নি। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো মাত্র ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ দেয় সরকার। সরকারের প্রস্তাব অনুযায়ী, কর দেওয়া হলে বাংলাদেশের বাইরে থেকে আসা এসব অর্থের উৎস সম্পর্কে আয়কর বিভাগসহ কোনো কর্তৃপক্ষই কোনো প্রশ্ন তুলবে না। কিন্তু গত ১০ মাসে একজনও টাকা ফিরিয়ে আনেনি। ফলে পাচার করা অর্থ দেশে আনার ব্যাপারে সরকার যে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ দিয়েছে, তা আর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে থাকছে না। একই সঙ্গে রিটার্নে অপ্রদর্শিত অফশোর সম্পদ বা বিদেশে স্থাবর সম্পদ দেখানোর সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগকে অসাংবিধানিক ও আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অর্থ পাচারের মতো ঘৃণিত অপরাধকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার নামান্তর বলে উল্লেখ করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। আর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি এই উদ্যোগকে নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, অর্থনৈতিকভাবে অবাস্তব এবং রাজনৈতিকভাবে অসহযোগিতাপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছিল।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে সাধারণ ক্ষমায় বিদেশে পাচার করা টাকা দেশে ফেরানোর সুযোগ দেবে না এনবিআর। চলতি বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে ১৯এফ নামে একটি ধারা যুক্ত করে ‘ট্যাক্স অ্যামনেস্টি’ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এই সুযোগ নেওয়া যাবে। ৩০ জুন পর্যন্ত যে কেউ জরিমানা ছাড়া শুধু ৭ শতাংশ হারে আয়কর দিয়ে বিদেশ থেকে যে কোনো পরিমাণ অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আনতে পারবেন। এক্ষেত্রে সম্পদের উৎস নিয়ে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা প্রশ্ন করতে পারবে না। করদাতার ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যাংক মোট অর্থের ৭ শতাংশ কর কর্তন করে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে এবং করদাতাকে একটি প্রত্যয়নপত্র দেবে। সেই প্রত্যয়নপত্র করদাতাকে রিটার্নের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, নীতিনির্ধারকরা তখন আশা করেছিলেন যে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে অনেকেই টাকা দেশে আনবেন। কিন্তু প্রথম ১০ মাসে এমন করদাতার দেখা মেলেনি। পাচারকারীর খাতায় নাম উঠাতে চাননি কেউ। তাই আগামী বাজেটে সুবিধাটি উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে রিটার্নে অপ্রদর্শিত অফশোর সম্পদ বা বিদেশে স্থাবর সম্পদ দেখানোর সুযোগ বাতিল করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এত কষ্ট করে যারা বিদেশে টাকা (পাচার) নিয়ে গেছে, তারা নিশ্চয় ফেরত আনার জন্য নেয়নি। বাজেটে দেওয়া কর ছাড়ে টাকা ফেরত আসবে সেটা প্রত্যাশা করা বোকামি। তা ছাড়া পাচার করা টাকাই রেমিট্যান্স হিসেবে আনলে সরকারই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, আবার টাকাও বৈধ হয়ে যাচ্ছে। তা হলে ৭ শতাংশ কর দিয়ে কেন মানুষ টাকা বৈধ করবে? আগামী বাজেটে এ সুবিধা রাখা উচিত নয়।
প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে অর্থ ফেরত আনতে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৭ দেশ এই সুযোগ দিয়েছে। শুধু ইন্দোনেশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ এ ক্ষেত্রে তেমন একটা সফল হয়নি।
যদিও সরকার আশা করছিল, ওই টাকা দেশের অর্থনীতির ‘মূল স্রোতে’ এলে চাঙা হবে অর্থনীতি, বাড়বে কর্মসংস্থান। বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, অবৈধ পন্থায় দেশ থেকে টাকা বের হয়ে গেলে তা ফেরত আনা কঠিন। কারণ, যারা টাকা পাচার করেছেন, তারা ওই টাকা দিয়ে বিদেশে বাড়ি-গাড়ি কিনেছেন। সেই টাকা দেশে আনার পর যদি কোনো ঝামেলা হয়- এমন ভীতিও আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।