নাজমুল ইসলাম : বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে গঠিত আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) জুমবাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ধরে নিতে পারি, টাস্কফোর্স কাজের শুরুটা করেছে, এখন প্রবেশ করা বাকি। বরফ যেহেতু গলছে, পূর্ণাঙ্গ কাজের জন্য আর বেশি দেরি নেই।’
বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মুনসুরকে সভাপতি করে ইতোমধ্যে টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজন ডেপুটি গভর্নরকে।
২৯ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্য কমিয়ে সভাপতিসহ নয়জন করা হয়েছে। এতদিন টাস্কফোর্সের জন্য আহ্বায়ক কমিটি ছিল, যার আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আর কমিটি ছিল ১৪ সদস্যের।
পুনর্গঠিত টাস্কফোর্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ; আইন ও বিচার বিভাগ; দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক); পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি); অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়; জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে একজন করে উপযুক্ত প্রতিনিধি থাকবেন।
নতুন প্রজ্ঞাপনে টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি বাড়ানো হয়েছে। এতদিন কার্যপরিধিতে তিনটি বিষয় থাকলেও এবার করা হয়েছে ছয়টি।
এগুলো হলো: বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা; পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা ও তা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া; বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া; জব্দ বা উদ্ধার সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশ, বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য আহরণ করা এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় পাচার করা টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলারে ১১৮ টাকা ধরে)। এ হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার করা হয়েছে অন্তত এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা।
সরকারের অন্তত সাতটি নজরদারি সংস্থা থাকার পরও সবার নাকের ডগায় এই বিপুল অঙ্কের টাকা চলে গেছে বিদেশে। আর এই পাচারের প্রায় ৮০ শতাংশই হয়েছে বাণিজ্যের আড়ালে।
তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, পণ্য আমদানি-রপ্তানির আড়ালে বড় অঙ্কের মুদ্রা পাচার করা হয়। কখনো আন্ডার ইনভয়েস কখনো বা ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে। প্রবাসীদের বাড়তি টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে হুন্ডির মাধ্যমেও একটি বড় অঙ্কের টাকা পাচার করা হয়।
দেশের গুটিকয়েক অসাধু শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে মাঝারি স্তরের ব্যবসায়ী-আমদানিকারকরাও এই পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কাস্টমস, বন্দরসহ অনেক সংস্থার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও যোগসাজশ থাকার প্রমাণ রয়েছে।
সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৭ শতাংশ কর দিয়ে বাংলাদেশের বাইরে যেকোনো রূপে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে দেখানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তবে এ সুযোগ কোনো কাজে লাগেনি, এক টাকাও ফেরত আসেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ কতটা সফল, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সক্ষমতার ওপর। বিএফআইইউকে শক্তিশালী করার জন্য ইউনিটটিকে আরও ক্ষমতা দিতে হবে, নিজস্ব তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ করতে হবে এবং সময়ে–সময়ে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসারে গোপনীয়তা রক্ষা করে জনগণকে তথ্য জানাতে হবে।
১ কেজি মিষ্টি কুমড়া ৮০ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হবে কল্পনাও করিনি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।