জুমবাংলা ডেস্ক : পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন প্রণয়নের পর থেকে প্রায় নয় বছর অতিবাহিত হলেও একটি বিধিমালা তৈরি করতে পারেনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। একটি খসড়া বিধিমালা তৈরি করে কেবল ঘষামাজা করা হচ্ছে। দেশে সব শ্রেণিপেশার কিছু মানুষের মধ্যে পিতা-মাতার ভরণপোষণে অনাগ্রহ দিন দিন প্রকট হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় প্রিয় সন্তান পিতা-মাতাকে খাবার, বাসস্থান, চিকিৎসা দিচ্ছে না।
পিতা-মাতার সম্পদ কেড়ে নিয়ে বাসাবাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে। অনেক পাষণ্ড সন্তান বাবা-মায়ের গায়ে হাত তোলে। শহর কিংবা গ্রাম এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। ২০১৩ সালে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইনে তাদের অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু বিধিমালার অভাবে আইনটি কার্যকর করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার বলেন, বিধিমালা তৈরির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
ইতোমধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে লেজিসলেটিভ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বিধিমালাটি যেহেতু সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা হবে এবং আর কোথাও অনুমোদনের জন্য যাচ্ছে না, সেহেতু শেষ দিকের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিখুঁতভাবে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই আমরা বিধিমালাটি অনুমোদন করতে পারব।
খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, সন্তান পিতা-মতাকে সঙ্গে রাখতে হবে। একাধিক সন্তান থাকলে পিতা-মাতা যার সঙ্গে বসবাস করতে চায় তাকে প্রাধান্য দিতে হবে। অন্য সন্তানরা সমভাবে পিতা-মাতার ভরণপোষণ ব্যয় বহন করবেন। একমাত্র সন্তান যৌক্তিক কারণে পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখতে না পারলে ভরণপোষণ ব্যয় ব্যাংকিং চ্যানেলে তাদের হিসাব নম্বরে পাঠাবেন। একাধিক সন্তান থাকলে এবং যৌক্তিক কারণে পিতা-মাতাকে সঙ্গে রাখতে না পারলে তারা সম্মিলিতভাবে নির্ধারিত অর্থ সরাসরি অথবা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের দিতে হবে। যেসব সন্তান পিতা-মাতার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন, তাদের প্রণোদনা হিসাবে সম্মাননা দেওয়া হবে। উপেজেলা, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় দিবসে অতিথি হিসাবে তাদের আমন্ত্রণ করা হবে। পিতা-মাতার ভরণপোষণে স্থায়ী ও চলতি তহবিল গঠন করা হবে। চলতি তহবিল জাতীয়, জেলা, উপজেলা ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত হবে। স্থায়ী তহবিল জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত হবে। খসড়া বিধিমালার দ্বিতীয় অধ্যায়ে জাতীয়, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, শহর এবং পিতা-মাতার ভরণপোষণ সহায়ক কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।
খসড়া বিধিমালায় পিতা-মাতার আচরণের বিষয়ে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার সঙ্গে সর্বাবস্থায় মর্যাদাপূর্ণ আচরণ ও যত্নসহকারে দেখভাল করবেন। পিতা-মাতার মতামতকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। পিতা-মাতার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। প্রয়োজনীয় সেবা শুশ্রূষা, পথ্য ও অন্যান্য উপকরণ যথাসম্ভব দ্রুত সরবরাহ করবেন। পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ বিনষ্ট করা যাবে না। পিতা-মাতার আইনগত অধিকার, উত্তরাধিকার, সম্পত্তি ও মোহরানা সমুন্নত রাখতে হবে। পিতা-মাতার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করবেন। কোনো প্রকার ছলচাতুরীর মাধ্যমে পিতা-মাতার সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না। পিতা-মাতার সম্পদে অন্য উত্তরাধিকারীদের অংশ আত্মসাৎ করা যাবে না। পিতা-মাতার নিজস্ব সম্পদ না থাকলে তাদের কোনোরূপ দোষারোপ করা যাবে না। পিতা-মাতার সুনাম, মর্যাদা ও পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রাখতে হবে। পারিবারিক ও সামাজিক আচার অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে পিতা-মাতার অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। পিতা-মাতার ভোটাধিকার, ধর্মাচার নাগরিক অধিকার প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। পিতা-মাতাকে দৈনিক তিনবার খাদ্য সরবরাহ, বয়স, অসুস্থতা ও প্রতিবন্ধিতা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শে পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে হবে।
তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সঞ্চয় করবেন। নিজ নিজ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবিষয়ক শিক্ষা সন্তানসহ পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন। তাদের শারীরিক সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদের সেবাযত্ন নিজেরাই নেওয়ার চেষ্টা করবেন। সন্তান পিতা-মাতার কোনো প্রয়োজন তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে না পারলে যথাসম্ভব ধৈর্য ধারণ করবেন। সন্তানদের আচরণ বিষয়ে খসড়া বিধিমালায় বলা হয়েছে, বিশেষ দিবসে বা অনুষ্ঠানে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করে উন্নতমানের খাবার দিতে হবে। ঋতু বিবেচনা করে পিতা-মাতার পছন্দমতো আরামদায়ক বস্ত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। বছরে অতিরিক্ত এক সেট নতুন পোশাক দিতে হবে। পিতা-মাতার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাদের জন্য বিছানাপত্র, আসবাবপত্রের সংস্থান, শৌচাগার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা এবং প্রবীণবান্ধব জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বছরে কমপক্ষে একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পিতা-মাতার বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ এবং পথ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
সঙ্গ প্রদান : সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের পিতা-মাতার সঙ্গে নিয়মিত সঙ্গ দিতে হবে। সন্তানের চাকরি বা অন্য কারণে নিয়মিত দেখা করা সম্ভব না হলে বছরে কমপক্ষে দুবার পিতা-মাতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে। প্রবাসী সন্তান বা সন্তানরা প্রয়োজনে আধুনিক যোগাযোগ পদ্ধতির মাধ্যমে পিতা-মাতার নিয়মিত খোঁজখবর নিবেন। বিনোদনকে গুরুত্ব দিয়ে পিতা-মাতাকে টেলিভিশন দেখার ব্যবস্থা, ক্লাব, পাঠাগার, পার্কে ঘোরানোসহ খবরের কাগজ, বই ইত্যাদি পড়ার জন্য নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে। তাদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে সন্তানদের সামর্থ্য অনুসারে ভ্রমণের আয়োজন করতে হবে। পিতা-মাতা মৃত্যু বরণ করলে সব সন্তান সশরীরে উপস্থিত থেকে তাদের দাফনকাফন, সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং তাদের দায়দেনা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো সন্তান বিদেশে অবস্থান করলে বা যৌক্তিক কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকলে উপযুক্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে পিতা-মাতার দাফরকাফন ও সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে।
পরিচর্যাকেন্দ প্রতিষ্ঠা : সরকার পিতা-মাতার ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে পরিচর্যাকেন্দ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করবে। সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপণমূলে যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে পিতা-মাতার পরিচর্যাকেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা করতে পারবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানে কোনো প্রতিষ্ঠান, সংস্থাকে পিতা-মাতার পরিচর্যাকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করবে। বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত পরিচর্যা কেন্দ কেও প্রণীতমালা অনুসরণ করতে হবে। পরিচর্যাকেন্দ নিবাসিকে আঘাত, প্রহার বা কোনো প্রকার শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করা যাবে না। আশালিক বা নির্যাতনমূলক আচরণ করা যাবে না। লজ্জিত, অপমানিত, হেয়, খাটো বোধ করে এমন কোনো আচরণ নিবাসির সঙ্গে করা যাবে না। -আমিরুল ইসলাম, যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।