বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : অনেক আগে মানুষ মনে করত পৃথিবী গোলাকার নয়, সমতল। কারণ মানুষ তখনো জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে ছিল। তবে মজার বিষয় হলো, এখনো কিছু মানুষ রয়েছে যারা বিশ্বাস করে পৃথিবী সমতল। ‘ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি’ নামে এদের আলাদা একটা আন্তর্জাতিক সংগঠনও রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে এদের প্রায় কয়েক লাখ অনুসারী। তবে এটি নিয়ে নতুন ধারণা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। সে অনুযায়ী, কয়েকশ কোটি বছর আগেও পৃথিবী সম্ভবত সমতলই ছিল। ইন্টারনেট থেকে তথ্য নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন জামিউর রহমান
‘ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার’-এর বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, নবগঠিত গ্রহ গোলাকার রূপে যাওয়ার আগে চ্যাপ্টা গোলাকৃতি আকার ধারণ করতে পারে। প্রচলিত ধারণা হলো, ‘প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক’ অথবা নবগঠিত নক্ষত্রপুঞ্জের আশপাশে থাকা ঘূর্ণয়মান গ্যাস থেকে বিভিন্ন গ্রহের উৎপত্তি, যার চারপাশে ধুলো ও গ্যাসের বলয় থাকে। তবে এটা কীভাবে ঘটছে, এখন পর্যন্ত সে বিষয়টি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি বিজ্ঞানীরাও। ফলে এখনো বিজ্ঞানে বিতর্কের বিষয় এটি। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি ‘কোর অ্যাক্রিশন’ নামে পরিচিত, যেখানে সৌরজগতে থাকা বিভিন্ন গ্রহের বৈচিত্র্যময় গঠনপ্রক্রিয়ার পাশাপাশি কীভাবে সৌর বায়ু বিভিন্ন হালকা উপাদানকে সৌরজগতের বাইরে ও ভারী বস্তুকে সূর্যের কাছাকাছি টেনে নেয়, সে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর ধূলিকণা থেকে বিশালাকারের গ্রহে পরিণত হওয়া পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটিরই ব্যাখ্যা রয়েছে এতে। তবে এর বিকল্প মডেলের কথাও বলেছেন বিজ্ঞানীরা, যা ‘ডিস্ক ইনস্ট্যাবিলিটি’ মডেল নামে পরিচিত।
এ তত্ত্ব অনেকের কাছেই খুব একটা পছন্দের না হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে এর। মডেল অনুসারে, ডিস্ক বা বলয়ের মধ্যে থাকা গ্যাস ও ধূলিকণা সরাসরি ঘনীভূত হয়ে গঠিত হয় গ্যাস জায়ান্ট গ্রহ, যেখানে সময়ও লাগে অনেক কম। এমনকি এ প্রক্রিয়া চলাকালীন ডিস্কটি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে পরে গ্রহে পরিণত হয়। নতুন এ গবেষণায় বিভিন্ন গ্রহের গঠন প্রক্রিয়ায় নতুন দিক খুঁজে পেতে সুপার কম্পিউটার ব্যবহার করেছেন ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার’-এর গবেষক দল। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন, গ্রহগুলো ‘ডিস্ক ইনস্ট্যাবিলিটি’ পদ্ধতির মাধ্যমে গঠিত হলে এরা বাইরের দিকে সমানভাবে বেড়ে উঠতে পারে না, বরং পুরো সময় একটি চ্যাপ্টা ডিস্ক আকারেই থাকে। এ সময় গ্রহগুলো তাদের নিরক্ষরেখার চেয়ে বরং মেরুর দিকেই বিভিন্ন জিনিস জড়ো করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে খানিকটা চ্যাপ্টা গোলকার বা ‘ওব্লেট স্ফেরয়েড’ রূপ নেয়, যা গ্রহের চ্যাপ্টা ডিম্বাকৃতির অবস্থার ধরন। তবে শেষ পর্যন্ত এরা ঠিকই গোলাকার রূপ ধারণ করে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়। যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স লেটার্স’-এ প্রকাশের অনুমোদন পেয়েছে নতুন গবেষণাটি। তবে আসল বিষয় হচ্ছে, এই গবেষণাটির মতে পৃথিবী সৃষ্টির শুরুর দিকেই কেবল সমতল থাকতে পারে।
সে যাই হোক, এবার জানা যাক, পৃথিবীটা গোলাকার কেন?
পৃথিবী গোলাকার হওয়ার মূল কারণ মধ্যাকর্ষণ শক্তি। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী মহাবিশ্বের যে কোনো বস্তু অপর বস্তুকে আকর্ষণ করে। মহাবিশ্বের সৃষ্টির শুরুতে যেসব বস্তুকণা কাছাকাছি অবস্থান করছিল, সেগুলো পরস্পকে আকর্ষণ করে এবং একত্রিত হয়ে গোলাকার আকৃতি ধারণ করে। এগুলো আবার দূরে অবস্থিত বড় আকৃতির বস্তুর প্রভাবে ঘুরতে থাকে। এভাবে মহাবিশ্বে সৃষ্টি হয় ঘুরতে থাকা গোলাকার বস্তু। পৃথিবীর সৃষ্টিও এভাবেই।
এবার কল্পনা করা যাক, পৃথিবীটা একটা চাকতির মতো চ্যাপ্টা ও সমতল। পৃথিবীর অভিকর্ষ সব সময় এর কেন্দ্রের দিকে সব বস্তুকে টানতে থাকে। তাই পৃথিবীর আকৃতি চাকতির মতো হলে সবগুলো সমুদ্র অবস্থান করত পৃথিবীর একদম মাঝ বরাবর, গঠন করত অত্যন্ত বিশাল এক সমুদ্রের। পৃথিবীর এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ভ্রমণ করাও খুব কষ্টকর হয়ে যেত। কারণ চাকতির কেন্দ্রের কাছাকাছি অনেক বেশি অভিকর্ষ টান অনুভব হবে, সামান্য নড়াচড়াও হয়ে যাবে কষ্টকর। আবার কেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যাবে, অভিকর্ষ টান তত কমতে থাকবে। এভাবে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন অভিকর্ষ টান অনুভব করত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।