মহাকাশে ভ্রমণ করা প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। এই সোভিয়েত নভোচারী ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল প্রথম পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করেন। সাধারণ মানুষের কাছে অজানা-অচেনা গ্যাগারিন দুই ঘণ্টার মহাকাশ ভ্রমণের ফলে নায়ক বনে যান রাতারাতি। হয়ে ওঠেন পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মানুষ। মানুষের অপার কৌতূহল মেটাতে নিজের শৈশব, পরিবার ও পাইলট জীবন নিয়ে গ্যাগারিন নিজেই একটি বই লেখেন। যার শিরোনাম ‘পৃথিবী দেখেছি’।
তিনি বলেন, আকাশচুম্বী বিশাল রকেটটার পাদদেশে বিদায় নিলাম সকলের সঙ্গে, লিফটে করে উঠলাম রকেটের মাথায়। তার কিছু আগে যে বিবৃতি দিয়েছিলাম সেটা অনেকেরই মনে আছে। কাগজে তা ছাপা হয়েছিল, প্রচারিত হয়েছিল রেডিওতে। তাহলেও তার কয়েকটা পঙক্তি তুলে দিতে ইচ্ছে করছে। ওড়ার আগে আমার মানসিক অবস্থা, আমার আবেগ অনুভূতির নিখুঁত প্রতিফলন তাতে পাওয়া যাবে:
‘মহাকাশের পথে যাচ্ছি বলে কি আমি খুশি? নিশ্চয় খুশি। কেননা সর্বকালে ও সর্বযুগেই একটা নতুন আবিষ্কারে অংশ নিতে পারাই লোকের মহত্তম সুখ। এই প্রথম মহাকাশযাত্রাটাকে আমি উৎসর্গ করতে চাই কমিউনিজমের লোকেদের উদ্দেশে—আজ সোভিয়েত জনগণ এই যে সমাজটায় পদার্পণ করছে, পৃথিবীর সমস্ত লোকই তাতে পৌঁছবে বলে আমি নিঃসন্দেহ। স্টার্টের আগে এখন সামান্য কয়েক মিনিট বাকি।
‘লোকে যখন দীর্ঘ যাত্রায় রওনা হয় তখন তারা পরস্পরকে বলে ‘আবার দেখা হবে’। প্রিয় বন্ধুরা, আমিও আপনাদের সেই কথাই বলছি। কী ইচ্ছেই না হচ্ছে চেনা অচেনা, দূর নিকট আপনাদের সকলকেই আলিঙ্গন করতে!’
তারপর কৃত্রিম আলোয় আলোকিত অসংখ্য যন্ত্রপাতির মধ্যে আমি গিয়ে বসলাম একা। বাইরের জগতের সঙ্গে সংযোগ রইল কেবল রেডিও মারফত। বলাই বাহুল্য আমার বুক দূরদূর করছিল, এরকম মূহূর্তে ও এরকম পরিস্থিতিতে অবিচল থাকতে পারে কেবল রোবট। তবে সেই সঙ্গেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে যাত্রা সফল হবে, এমন কিছুই ঘটবে না, যা আমাদের বিজ্ঞানী ও টেকনিশিয়ানদের নজর এড়িয়ে গেছে। রকেট, ওড়ার পোষাকটা, যন্ত্রপাতিগুলো, পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ, খাদ্যের উৎকর্ষ – এসবের ত্রুটিহীনতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত ছিলাম। এই সব জিনিসগুলোকে একত্রে ধরলেই তো দাঁড়ায় সেইটে, যাকে বলে ‘মহাকাশ যাত্রায় প্রস্তুতি’।
স্টার্টের আগে কেবিনের কেদারাটায় বসে কী ভাবছিলাম আমি? রেডিও যোগাযোগের ব্যবস্থাটা আগেই পরীক্ষা করে দেখেছিলাম। গান চলছিল তখন: আমার যাতে একলা না লাগে তার জন্যেই বন্ধুদের পক্ষ থেকে এই ব্যবস্থা। হাতে সময় ছিল ষাট মিনিট।
মানবিক চিন্তার গতিবেগ কী, ঘণ্টায় কতখানি সে পাড়ি দিতে পারে সেটার এখনো হিসেব হয়নি। মনে পড়ছিল বহুকাল আগের একটা দিন, আমার গলায় যখন পাইওনিয়রের টাই বেধে দেওয়া হয়। জানতাম, পাইওনিয়র মানে ‘অগ্রগামী’ ‘পথিকৃৎ’। চমৎকার কথাটা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।