জুমবাংলা ডেস্ক : ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের আবর্জনা ফেলনা নয়, জমিয়ে রাখলে মহল্লায় মহল্লায় গিয়ে নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছে চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে নাগরিকদের সচেতন করা এবং পরিবেশ বান্ধব পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে মেয়রের এমন ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।
দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে বিকল্প সামগ্রী হিসেবে পলিমারের ব্যবহার হচ্ছে৷ বাজারের থলে থেকে শুরু করে ঔষধের বোতল, নানান প্রকার খাবারের প্যাকেট, খাদ্য পরিবেশনের পাত্র, ফুলদানি এসব কিছুরই বিকল্প হিসেব ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক৷ অপেক্ষাকৃত সস্তা, সহজ বহনযোগ্য হওয়ার কারণে দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে পলিমারের তৈরি সামগ্রী৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় প্লাস্টিকের সামগ্রী যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে, এতে করে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ৷ যেহেতু প্লাস্টিকের সামগ্রী মাটিতে মিশে যায় না, এর একাংশ পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়, তাই ক্রমশ তা বর্জ্য হিসেবে জমা হচ্ছে লোকালয়ের বুকে৷ নালা, খাল, নদীতে পড়ে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। কৃষিজমিগুলো ধীরে ধীরে অনাবাদিতে পরিণত হচ্ছে। তাই পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতেই রাউজান পৌরসভার এমন উদ্যোগ।
সরেজমিন দেখা যায়, নিত্যদিন রাউজান পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে বসছে ভ্রাম্যমাণ আবর্জনার হাট। প্রতিদিন বিকেলে পৌরসভা কার্যালয় চত্বরে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড হতে কিশোর, মহিলা, যুবক-বৃদ্ধ বাড়ির আশেপাশের আবর্জনা কুড়িয়ে নিয়ে আসলে বস্তা প্রতি দুইশত টাকা করে কিনে নেন মেয়র।
মেয়রের এমন উদ্যোগে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া অনেক মহিলা ও যুবক পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ও হাট বাজার হতে প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা কুড়িয়ে দৈনিক উপার্জন করছে।
এমনই একজন চেমন আরা বেগম বলেন, আমি আমার নাতিসহ প্রতিদিন ৪ হতে ৫ বস্তা সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় পৌরসভা নিয়ে আসলে মেয়র কিনে নেন। এখন দৈনিক ৪শ হতে ৫শ টাকা আয় হয়।
রাউজান জলিল নগর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ হোসেন কোম্পানি বলেন, বছরখানেক আগে রাউজান পৌরসভার কার্যালয় চত্বর ছিল আবর্জনার ভাগাড়। বর্তমানে পৌরসভার মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ পরিবেশ বান্ধব উদ্যোগের কারণে পৌরসভার প্রতিটি হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট এখন প্লাস্টিকমুক্ত। এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখুক মেয়রের কাছে এই প্রত্যাশা রাখি।
পৌর নাগরিক দীপলু দে দিপু বলেন, মেয়রের প্লাস্টিক আবর্জনা ক্রয়ের কারণে কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মহীন কিছু মানুষ নদী, নালা ও কৃষি জমি হতে প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা সংগ্রহ করে মেয়রের নিকট বিক্রি করছেন। এতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হচ্ছে। কৃষি জমিগুলো চাষের উপযোগী হচ্ছে।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ বলেন, রাউজান পৌরসভাকে একটি জনবান্ধব, আধুনিক ও পরিবেশ বান্ধব পৌরসভায় উপনীত করার জন্যে আমরা বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনার হাট এরই একটি অংশবিশেষ। রাউজান পৌরসভাকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে আমরা পৌর নাগরিকদের কাছ হতে ভ্রাম্যমাণ আবর্জনার হাট বসিয়ে প্রতিবস্তা একশত টাকা করে কিনে নিচ্ছি। প্রতি হাটে হতে পাঁচ-ছয় শতাধিক বস্তা অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা সংগৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার বস্তা প্লাস্টিক আবর্জনা ক্রয় করেছি। আগামীতে পৌরসভার কর্মচারীরা প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আবর্জনা সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত এসব আবর্জনাগুলো প্রক্রিয়াজাতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, রাউজানের পৌরসভার মেয়র অপচনশীল প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা ক্রয়ের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা বেশ প্রশংসনীয়। এই প্লাস্টিক আবর্জনা পঞ্চাশ বছরে পচবে না। তাই নাগরিকদের পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন করার জন্য পৌরসভার আবর্জনা ক্রয়ের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
সচেতনতা বাড়াতে সৈকতে পড়ে থাকা বর্জ্য দিয়ে সেন্টমার্টিনে মাছের ম্যুরাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।