জুমবাংলা ডেস্ক : আমগোরে আয়ের কোনো পথ ছিল না। দেড় বছর আগে চারটা যমুনা পাড়ি ছাগলের বাচ্চা কিনি। তিনটা ছাগী। একটা খাসি।
এখন আমার ২০টা ছাগল। আমি মাসে একটা করে ছাগল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারি। এই আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। কথাগুলো বলছিলেন শেরপুরের শ্রীবরদীর সীমান্তের গারো পাহাড়ের হারিয়াকোনা গ্রামের আদিবাসী নারী দিনা রানী চিরান।
দিনা রানী চিরান আরো বলেন, দিনে বনের লতাপাতা আর ঘাস খায়। রাতে থাকে ঘরে। কোনো খরচ হয় না। ঘরে এলে কিছু খাবার দিই।
খাবারের জন্য পাহাড় থেকে ছাগলগুলো তাড়াতাড়ি বাড়ি আসে। অনেকে আমার খামার দেখে ছাগল কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগলসহ আরো উন্নত জাতের ছাগল দিয়ে খামার বড় করতে চাই।
তার মতো যমুনা পাড়ি ছাগলের খামার করে সফলতার গল্প শোনালেন আরেক আদিবাসী নারী বাসনা রানী কোচ। বাড়ি পার্শ্ববর্তী বাবেলাকোনা গ্রামে।
তার ভাই দুই বছর আগে যমুনা পাড়ি দুটি ছাগলের বাচ্চা ক্রয় করে তাকে দেন। এখন তার খামারে ২৬টি ছাগল। প্রতি মাসে দুটি করে ছাগল বিক্রি করেন। তার এখন মাসে আয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
বাসনা রানী বলেন, আমার খামারে ৫০টির মতো ছাগল ছিল। অর্ধেক বিক্রি করে সংসারের কাজে লাগিয়েছি। এর পরও প্রতি মাসে দুইটা করে ছাগল বিক্রি করতে পারি।
তিনি আরো বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার স্বামী মারা যায়। সংসারের বোঝা আমার কাঁধে পড়ে। আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটিয়েছি। এখন ছাগলের খামার দিয়ে সংসার চালাই। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ দিই। দিনটা রানী চিরান ও বাসনা রানী কোচের সফলতা দেখে অনেকে যমুনা পাড়ি ছাগলের খামার করছেন। পরিকল্পিতভাবে তার বিশাল আকারের ছাগলের খামার গড়ে তোলায় রয়েছে উজ্জ্বল সম্ভাবনা। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) সরেজমিনে গেলে সফল এ দুই নারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ উপজেলা পশুসম্পদ দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে উঠে আসে এমন তথ্য।
জানা যায়, শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, দার্শিকোনা, চান্দাপাড়া, বকুলতলা, রাঙাজান, খারামোরা, খ্রিস্টানপাড়া, চুকচুকি, রাজার পাহাড়সহ অন্তত ২০টি গ্রাম। এসব গ্রামে পাহাড়ে উঁচু-নিচু টিলা ভূমির বিস্তীর্ণ এলাকায় রয়েছে প্রচুর ঘাস আর লতাপাতা। পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারীরা একসময় কর্মসংস্থানের অভাবে খুবই কষ্টে দিন কাটাত। কয়েক বছর যাবৎ এই অঞ্চলের আদিবাসী অনেক নারী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে যমুনা পাড়ি জাতের ছাগলের খামার করছেন। অল্প দিনেই অনেকে পেয়েছেন সফলতা। ছাগল পালনের সফলতা দেখে অনেকে নতুন করে ছাগলের খামার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কথা হয় শ্রীবরদী উপজেলা পশু সম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সম্রাটের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিটি খামারে নিয়মিত টিকা দিই। এ ছাড়া পরিদর্শন করে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি আরো বলেন, যমুনা পাড়ি ছাগল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবার তিন-চারটি করে বাচ্চা হয়। এতে অল্প দিনে হচ্ছেন খামারের মালিক। তা ছাড়া পাহাড়ি এলাকায় ছাগল পালনে খাদ্য খরচ নেই বললেই চলে। সারা দিন পাহাড়ের ঝোপ-জঙ্গলের লতা-পাতা আর ঘাস খেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে। এ জন্য পাহাড়ি এলাকার অনেকেই যমুনা পাড়ি ছাগলের খামার গড়ে তুলছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।