ঘুম আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু আপনি প্রতিদিন এমন কিছু ভুল করছেন যেগুলো আপনার ঘুমকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তা হয়তো আপনি বুঝতেই পারছেন না। ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণগুলো যদি সময়মতো শনাক্ত না করা যায়, তবে শরীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
Table of Contents
ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণ: প্রতিদিনের অভ্যাসে যেসব ভুল
অনেকেই রাতভর বিছানায় গড়াগড়ি করেন কিন্তু ঘুম আসে না। এই সমস্যার পিছনে রয়েছে কিছু সাধারণ অথচ মারাত্মক ভুল। ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণ হিসেবে নিচের অভ্যাসগুলোকে দায়ী করা যায়:
- ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার: স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণে বাধা দেয়, ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।
- ক্যাফেইন গ্রহণ: সন্ধ্যার পর কফি বা চা পান করলে ক্যাফেইনের উত্তেজক প্রভাব ঘুমে বাধা দেয়।
- অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি: প্রতিদিন এক সময়ে ঘুমাতে না গেলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি বিঘ্নিত হয়।
- চিন্তা বা স্ট্রেস: মানসিক চাপ থাকলে মাথা ব্যস্ত থাকে এবং ঘুম আসতে সময় লাগে।
ঘুম ভালো রাখতে করণীয়: সচেতনতা ও নিয়মানুবর্তিতা
ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণগুলো বুঝে যথাযথ ব্যবস্থা নিলে আবারও শান্ত ঘুমে ফিরে যাওয়া সম্ভব। নিচের কিছু পরামর্শ মেনে চললে ঘুমের মান উন্নত হবে:
- ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার কমানো
- ঘুমের সময় নির্দিষ্ট রাখা — প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে ও উঠতে চেষ্টা করুন
- সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা
- মানসিক প্রশান্তির জন্য ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম
- বেডরুমে অন্ধকার ও নীরব পরিবেশ নিশ্চিত করা
এছাড়া ঘুমজনিত সমস্যার জন্য পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা ও প্রযুক্তির প্রভাব
আজকের প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপের ব্যবহার বেড়েছে। এতে ব্লু লাইট এক্সপোজারের মাত্রা অনেক বেড়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, রাত ৮টার পর ইলেকট্রনিক স্ক্রিন ব্যবহার করলে ঘুমের সময় বিলম্ব হয় ও ঘুম গভীর হয় না। Sleep Foundation এবং WHO এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও এই বিষয়ে সতর্ক করছে।
হরমোন, খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের সম্পর্ক
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ঘুমের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সন্ধ্যার পর ভারী খাবার খাওয়া, বেশি চিনি বা ফাস্টফুড গ্রহণ ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া মেলাটোনিন, কর্টিসল এবং ইনসুলিনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে ঘুমে প্রভাব পড়ে। তাই সুষম ও হালকা আহার, পর্যাপ্ত পানি পান এবং রাতের বেলা অতিরিক্ত খাওয়ার পরিহার করা উচিত।
ঘুমের পরিবেশ ঠিক রাখা কতটা জরুরি?
ঘুমের মান বাড়াতে বেডরুমের পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ শব্দ, অতিরিক্ত আলো বা গরম-ঠাণ্ডার ভারসাম্য না থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। গাঢ় পর্দা, হালকা আলো, নরম বিছানা এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা ঘুমের জন্য সহায়ক। এছাড়া অযাচিত শব্দ কমাতে white noise মেশিন ব্যবহার করাও উপকারী হতে পারে।
জেনে রাখুন-
- প্রশ্ন: মোবাইল ব্যবহারে ঘুম কতটা নষ্ট হয়?
উত্তর: মোবাইলের ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণে বাধা দেয়, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় ও ঘুমের মান খারাপ হয়। - প্রশ্ন: রাতে ভারী খাওয়ার কারণে ঘুমে সমস্যা হয় কেন?
উত্তর: ভারী খাবার হজমে সময় নেয়, ফলে পাকস্থলী সক্রিয় থাকে এবং শরীর ঘুমে যেতে সময় নেয়। - প্রশ্ন: ঘুমের সময় নির্দিষ্ট না হলে কী হয়?
উত্তর: শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক বিঘ্নিত হয়, ফলে ঘুমের সময় ও মানে ব্যাঘাত ঘটে। - প্রশ্ন: স্ট্রেস কমিয়ে ঘুম বাড়ানো সম্ভব কি?
উত্তর: হ্যাঁ, ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ এবং রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুম ভালো হয়। - প্রশ্ন: সাউন্ড বা লাইটের প্রভাব ঘুমে কেমন পড়ে?
উত্তর: অতিরিক্ত আলো বা শব্দ ঘুমকে বিভ্রান্ত করে এবং গভীর ঘুম আসতে বাধা দেয়। তাই নীরব ও অন্ধকার ঘর ঘুমের জন্য উত্তম।
সুস্থ জীবনের জন্য ভালো ঘুম অপরিহার্য। প্রতিদিনের কিছু ভুল অভ্যাসই আমাদের ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সচেতন হয়ে সেগুলো সংশোধন করাই হলো সঠিক পথ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।