নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে ফ্ল্যাটে গলা কেটে আব্দুর রহমান (৫২) খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে র্যাব-১।
স্বামী খুনের স্বীকারোক্তি দিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন গ্রেপ্তার স্ত্রী সামিরা।
সোমবার রাতে সামিরা এবং তাকে পালাতে সহয়তাকারী তার বাবা আলী হোসেনকে ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গ্রেপ্তার সামিরা আক্তার (২৬) গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার চকপাড়া এলাকার নিহত আব্দুর রহমানের ৪র্থ স্ত্রী। আলী হোসেন (৫৫) বরিশালের উজিরপুর এলাকার মৃত ফজলুল হকের ছেলে।
মঙ্গলবার সকালে র্যাব-১ এর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে শ্রীপুরের কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (প্রশিকা মোড়) এলাকায় তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার এক ফ্ল্যাট থেকে পুলিশ, ক্রাইমসিন ইউনিট এবং সিআইডির উপস্থিতিতে আব্দুর রহমানের ঝলসানো ও গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়।
খুনীদের আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্প ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে দক্ষিণখাণে সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযান চালিয়ে সামিরা আক্তার ও পালাতে সহায়তাকারী তার বাবা আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা ওই খুনের ঘটনার সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার মর্মান্তিক বর্ণনা দেয়।
কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, সামিরার ভাষ্যমতে তিনি (সামিরা) নিহত আব্দুর রহমানের চতুর্থ স্ত্রী। আব্দুর রহমান পেশায় জমির ব্যবসায়ী ছিলেন। গত ১০ ফেব্রুয়ারি স্বামী তার ব্যবসায়িক পাটনার রতনের সঙ্গে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক যৌন কাজে লিপ্ত করে। ওই রাত ১১টার দিকে রতন বাসা থেকে চলে যায়।
ভোররাত (১১ ফেব্রুয়ারি) ৩টার দিকে সামিরা দা দিয়ে আব্দুর রহমানকে ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে হত্যা করে এবং মৃত নিশ্চিত হওয়ার পর লাশ তোশকে মুড়িয়ে রাখে। লাশ যেন চেনা না যায় এর জন্য লাশের মুখ এসিড দিয়ে ঝলসে দেয়। এরপর আরো ৩ দিন সামিরা ওই বাসায় অবস্থান করে। সামিরা লাশ সরিয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়ে বাবা-মার সহায়তায় ওই বাসা থেকে পালিয়ে যায়।
পালিয়ে প্রথমে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ফুলবাড়িতে তার এক বান্ধবীর বাসায় দুইদিন, সেখান থেকে তার মামার বাসা নওগাঁয় কিছুদিন অবস্থান করে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ খান এলাকায় তার চাচার বাসায় আত্মগোপন করে থাকে।
সামিরা জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানায়, আব্দুর রহমান এবং তার উভয়েই বাড়ি শ্রীপুর এলাকায় হওয়ার সুবাদে তারা পূর্বপরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আব্দুর রহমার তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে বসবাস করতেন। সেমময় সামিরা ছিল টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রি পরীক্ষার্থী। পূর্বপরিচিতি থাকায় সামিরা আব্দুর রহমানের টঙ্গীর বাসায় থেকে তার ডিগ্রি পরীক্ষা অংশ নেয়। ওই সময় আব্দুর রহমান সামিরাকে বিভিন্নভাবে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে সামিরাকে খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ পান করিয়ে অচেতন করে আব্দুর রহমান একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে। পরে ধর্ষণের ভিডিও এবং হত্যার ভয় দেখিয়ে আব্দুর রহমান তাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় সামিরার প্রথম স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। এরপর থেকে সামিরা শ্রীপুরের নয়নপুরে এক ঔষধের দোকান পরিচালনা করে জীবিকা নিবাহ করে আসছিলেন।
এক পর্যায়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আব্দুর রহমান কোর্টের মাধ্যমে সামিরাকে বিয়ে করে এবং শ্রীপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করে। এরপর থেকে আব্দুর রহমান ব্যবসায়িক স্বার্থে আবার কখনো বিপুল টাকার বিনিময়ে তার পাটনারদের সাথে স্ত্রী সামিরাকে যৌন কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করত। এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সামিরা ডিভোর্স চাইলে আব্দুর রহমান সামিরাকেসহ তার মা-ভাইকে খুন করার হুমকি দিত। এসব ঘটনার জেরে সামিরা তার স্বামী আব্দুর রহমানকে খুন করে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel