কুবি প্রতিনিধি: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবন শেষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় সনদপত্র। গায়ে কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পড়ে আনন্দে মেতে উঠেন গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার ১৩ বছর হলেও এখনও কোনো শিক্ষার্থী সমাবর্তনের এ স্বাদ পাননি। অবশেষে এই আনন্দের মহোৎসবে মেতে উঠতে যাচ্ছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। আগামী বছরের (২০২০) ফেব্রুয়ারিতেই সমাবর্তন আয়োজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে সমাবর্তন আহবায়ক কমিটি।
২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই সমাবর্তনে ১ম (২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষ) থেকে ৮ম (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বাদ পড়তে যাচ্ছে ফার্মেসী বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়েও অন্য বিভাগের সাথে শেষ হয়নি তাদের স্নাতক পর্ব। এর জন্য ফার্মেসীর বিভাগীয় প্রধান এবং সমাবর্তন আয়োজক কমিটি বিভাগটির ৫ বছর মেয়াদী স্নাতক প্রক্রিয়ার কথা বললেও শিক্ষার্থীরা তাদের ১ বছর দেড় মাসের সেশনজটকে দায়ী করছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, সেশনজটের কারণে তারা এখনো স্নাতক সম্পূর্ণ করতে পারেননি। এজন্য তারা সমাবর্তন থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ । তারা বলছেন, প্রায় ৬ বছর অতিক্রান্ত হলেও বিভাগ ও প্রশাসনের ব্যর্থতায় তারা স্নাতক শেষ করতে না পারার দায়ভার শিক্ষার্থীরা কেন নিবে?
ফার্মেসী ৮ম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাওসার হামিদ জীবন বলেন, ‘সমাবর্তন ব্যাচ ভিত্তিক হলে ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টেকেও রাখতে হবে। আমাদের ১ বছর দেড় মাসের জট আমরা ক্রিয়েট করিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন/ডিপার্টমেন্টেরই ব্যর্থতা। তাহলে এর দায়ভার আমরা কেন নেব?’
বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী মোঃ আশরাফুল রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘১ম সমাবর্তনকে ঘিরে অনেক বেশি আশা আকাঙ্ক্ষা থাকে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে। সুতরাং প্রথম সমাবর্তনে যাতে এই পরিবারের সকলের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী । সেখানে একটা বিভাগকে বাদ দিয়ে ব্যাচ ভিত্তিক সমাবর্তন এই আয়োজনের মূল সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়। একটা বিভাগ ৬ বছরেও তাদের কোর্স শেষ করতে না পারার দায় অবশ্যই শিক্ষার্থীদের নয়, সে দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগের । খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করে সকল বিভাগকে এক সাথে নিয়ে একটি সুন্দর সমাবর্তন অনুষ্ঠান উপহার দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ রইল ।’
এদিকে প্রথম সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করতে না পারার বিষয়ে ফার্মেসী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মোঃ এনামূল হক বলেন- ‘অন্যান্য বিভাগে যেখানে আট সেমিস্টারে অনার্স, সেখানে আমাদের কারিকুলাম অনুযায়ীই অনার্সে দশটি সেমিস্টার। বাড়তি দু’টো সেমিস্টারের জন্য অনার্সের সময়কালও আমাদের পাঁচ বছর, যেটা অন্য বিভাগে চার বছর। একই কারণে আমাদের ৮ম ব্যাচ এখনো যেহেতু অনার্স শেষ করতে পারেনি, সেহেতু তারা এই সমাবর্তন কীভাবে পাবে?’
সমাবর্তন না পাওয়ার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সেশনজট সংশ্লিষ্টতার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অন্যদের সাথে সেমিস্টার তুলনা করতে গেলে আমাদের ২০১৩-১৪ সেশনের (৮ম ব্যাচ) শিক্ষার্থীরা বরং এখন মাস্টার্স সমপর্যায়ে আছে। কারণ তাদের ৪র্থ বর্ষ শেষ করে এখন ৫ম বর্ষের ক্লাস চলছে। তাই এক-দেড় বছরের সেশন জটের কথাটা ভুল।’
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমাবর্তন কমিটির আহবায়ক ড. এ কে এম রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘সমাবর্তনে ৮ম ব্যাচ পর্যন্ত বিবেচনা করা হচ্ছে, তবে ফার্মেসী ছাড়া। কারণ অন্যদের অনার্স ৪ বছর হলেও ফার্মেসীর ক্ষেত্রে তা ৫ বছর। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফার্মেসি ৮ম ব্যাচকে পরবর্তী সমাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।