শুভজ্যোতি ঘোষ, বিবিসি বাংলা : রবিবার বিকেলের দিকে ভিডিওটা নিজের টুইটার হ্যান্ডলে পোস্ট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সঙ্গে কয়েক চরণ কবিতাও।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে তার বাসভবনে ময়ূর ও ময়ূরীদের নিজের হাতে খাওয়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।
সাত নম্বর জনকল্যাণ মার্গের সুবিশাল বাংলোর প্রশস্ত বাগানে তিনি হেঁটে যাচ্ছেন, ময়ূর পেখম তুলে তার আশেপাশে নেচে বেড়াচ্ছে, সেই দৃশ্যও ছিল ওই ভিডিওতে।
ইউটিউবেও সেই একই ভিডিও পোস্ট করে তিনি তার ক্যাপশন দেন, “মূল্যবান মুহূর্ত”।
কিন্তু এই আপাত-নিরীহ ছবির কোলাজ নিয়েই এখন রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে – বাড়িতে ময়ূরকে খাইয়ে প্রধানমন্ত্রী আইন ভেঙেছেন কি না সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
অন্যতম বিরোধী দল আরজেডি-র নেতা শ্যাম রজক বলছেন, “বছরতিনেক আগে যখন লালুপ্রসাদজির বাংলোতে দুটো ময়ূর ছাড়া হয়েছিল তখন কিন্তু এই বিজেপিই বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিল।”
“১৯৭২ সালে দেশের পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই আইন অনুসারে ময়ূর একটি বিপন্ন প্রাণী এবং বাড়িতে ময়ূর পোষা সম্পূর্ণ বেআইনি।”
“এখন দেশের আইন তো প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে লালুপ্রসাদ যাদব – সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত!”
আরজেডি-র এমপি ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোজ ঝা আবার মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী ময়ূরদের সঙ্গে যে ভিডিওটি পোস্ট করেছেন সেটি ‘নান্দনিকভাবে খুব কুরুচিকর’!
তার যুক্তি হল, “আমাদের অর্থনীতির অবস্থা খুব সঙ্গীণ। রোজ প্রায় সত্তর হাজার নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে, মারাও যাচ্ছে হাজারখানেক।”
“এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এই ধরনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে পারেন? এটা তো রোমের মানুষদের দুর্দশা দেখে রোমান সম্রাটদের হাসিঠাট্টা করার মতোই ব্যাপার”, বিবিসিকে বলছিলেন মনোজ ঝা।
বিহারে নির্বাচন আসন্ন – সে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি স্পষ্টতই এই ময়ূরকে খাওয়ানোর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীকে এখন বিপাকে ফেলতে চাইছে।
২০১৭র ফেব্রুয়ারি মাসে পাটনায় লালুপ্রসাদ যাদবের বাংলোতে দুটো ময়ূর ছাড়ার ঘটনা নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। শোনা যায়, কোনও এক ধর্মগুরু লালুপ্রসাদকে পরামর্শ দিয়েছিলেন বাড়িতে ময়ূর রাখলে ভাগ্য ফিরবে।
লালুপ্রসাদের বড় ছেলে তেজ প্রতাপ তখন রাজ্যের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। তাঁর উদ্যোগেই এরপর দুটো ময়ূর এনে লালুপ্রসাদ যাদবের ১০ নম্বর সার্কুলার রোডের বাংলোতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু বিজেপি এ নিয়ে তুমুল হইচই শুরু করলে দুদিন পরেই ময়ূর দুটিকে বাংলো থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
লালুপ্রসাদ তখন দাবি করেন, “ওরা নিজে থেকেই অন্যত্র উড়ে গেছে”।
এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর ময়ূরকে খাওয়ানো নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পর বিজেপি অবশ্য বলার চেষ্টা করছে, দুটো ঘটনার মধ্যে কোনও মিল নেই।
বিহার বিজেপির প্রধান মুখপাত্র রজনী রঞ্জন প্যাটেলের কথায়, “লালুপ্রসাদ তার বাংলোতে ময়ূরকে খাঁচাবন্দী করতে চেয়েছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সুপ্রশস্ত বাগানে ময়ূররা নিজে থেকেই আসে, অবাধে ঘুরে বেড়ায়।”
“প্রধানমন্ত্রী মোদী বন্যপ্রাণী ভালবাসেন বলে ময়ূররা তাঁর কাছে আসতে ভালবাসে। এখানে ময়ূর পোষার বা আইন ভাঙার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!”
শুধু প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনই নয়, দিল্লির জেএনইউ ক্যাম্পাস-সহ বহু জায়গাতেই অসংখ্য ময়ূর যে অবাধে ঘুরে বেড়ায়, সে কথাও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।