আমিনুল ইসলাম মির্জা, বাসস (নয়াদিল্লি): প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল দেবে এবং বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন যুগের সূচনা করবে বলে কূটনীতিক, ব্যবসায়ী নেতা এবং সাংবাদিকরা উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে তিন দিনের সরকারি সফরে ৫ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সফরের সময় তিনি নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন এবং ৬৬০ মেগাওয়াট রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন, ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে ভাষণসহ একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।
তার সফরের আগে উভয় দেশের সাবেক কূটনীতিক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকরা জাতীয় বার্তা সংস্থা বাসসের সঙ্গে এ সফরের ফলাফল নিয়ে কথা বলেছেন।
তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এই সফর দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে এবং ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করবে।
এখানে বাসসের সাথে আলাপকালে, তারা বলেছেন, উভয় প্রধানমন্ত্রী তাদের বৈঠকে যোগাযোগ, বাণিজ্য,পানি বন্টন থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক বিষয়গুলো আলোচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, এটি অবশ্যই দুই দেশের মধ্যে অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে এবং অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভারত ও বাংলাদেশকে অনেক কাছাকাছি নিয়ে আসবে।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘আমি এই সফরের বিষয়ে খুব আশাবাদী। কারণ এটি এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বিশ্বজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক দেশীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সমস্যা নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে। তাই এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সফর হবে।’
তিনি বলেন, বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, সংযোগ, দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সরবরাহ চেইন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা, সন্ত্রাস বিরোধী এবং অবশ্যই বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।
শহীদুল হক বলেন, ‘আমি মনে করি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির উপর দুই নেতার আলোচনা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে অনুপ্রেরণা যোগাবে,’। তিনি বর্তমানে ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধিষ্ঠিত আছেন।
সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (সিইপিএ) চূড়ান্তকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবার এটি স্বাক্ষরিত হলে এটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও অনেকাংশে বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে, ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের ফলাফল সম্পর্কে উচ্চ আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এই সফর দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার একটি নতুন যুগের সূচনা করবে’।
সিইপিএ সম্পর্কে, শ্রিংলা বলেন, যদি এটি চূড়ান্তভাবে স্বাক্ষরিত হয়, তাহলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রায় ১.৫ শতাংশ বাড়তে পারে।এই পদক্ষেপের ফলে ভারতও অনেক সুবিধা পাবে।’
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর অত্যন্ত সফল হবে।
কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) মহাপরিচালক চন্দ্রজিৎ ব্যানার্জি বলেছেন, শেখ হাসিনার ভারত সফর ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশ-ভারত অর্থনৈতিক সম্পর্কের গতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে, যা বছরের পর বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২১-২২ সালে কোভিড-১৯ দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ১৮ বিলিয়ন ডলারের ল্যান্ডমার্ক অতিক্রম করেছে।
তিনি বলেন, ভারত, বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে উন্নত বাণিজ্য ও পরিবহন সংযোগ সমগ্র উপ-আঞ্চলিক একীকরণের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে, তা বিবিআইএন বা বিমসটেক যাই হোক না কেন।
ব্যানার্জী বলেন, এই সফর ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের নতুন করে উদ্বুদ্ধ করবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
তিনি আশা করেন, ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো চালু হলে বাংলাদেশে আরও বেশি ভারতীয় বিনিয়োগ আসবে।
সিইপিএ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এলডিসি অবস্থা থেকে উত্তরণের সময়, ‘এই চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য অব্যাহত রাখার জন্য একটি ভিত্তি প্রদান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
প্রবীণ সাংবাদিক এবং দক্ষিণ এশিয়ার ফরেন করেসপন্ডেন্টস ক্লাবের (এফসিসি) সাবেক সভাপতি এস ভেঙ্কট নারায়ণ বলেছেন, ভারতের জনগণ এখানে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কারণ তাকে দেশের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তিনি বলেন, তাঁর (শেখ হাসিনার) ভারত সফরে একটি ‘বড় সাফল্য’ আসবে। কারণ এটি ভারত-বাংলাদেশকে অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কাছাকাছি আনতে সাহায্য করবে।
দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মত দেন যে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিগগিরই চুক্তিটি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা উচিত।
অস্ট্রেলিয়ার নেটওয়ার্ক সেভেন টিভি চ্যানেলের দক্ষিণ এশিয়া ব্যুরো চিফ ভেঙ্কট বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর অংশীদার। তাই সেই নদীগুলো থেকে পানির ন্যায্য অংশ পাওয়ার বৈধ অধিকার বাংলাদেশের রয়েছে। তাই শিগগিরই তিস্তা চুক্তি হওয়া উচিত।
এই প্রসঙ্গে, তিনি ২০১১ সালে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির চূড়ান্তকরণের কথা উল্লেখ করেন।
চুক্তি স্বাক্ষরের চূড়ান্ত পর্যায়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার সীমাবদ্ধতা দেখালে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেন এফসিসি’র সাবেক সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে, দীর্ঘ ১২ বছর পর ২৫ আগস্ট নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।