জুমবাংলা ডেস্ক: দেশের প্রথম ছয় লেনের দৃষ্টিনন্দন কালনা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা কালনা সেতুর টোল হারও ইতোমধ্যে নির্ধারণ করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ আগস্টের মধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দু’পাশের বাইপাস সড়কের নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে।ফলে যানবাহন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত কালনা সেতু।
পদ্মা সেতু চালুর পর বেনাপোল স্থলবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সহজতর যোগাযোগে এ সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে কালনা সেতু নির্মিত হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এপারে নড়াইলের কালনাঘাট। ওপারে গোপালগঞ্জের শংকরপাশা। মাঝ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী। এ নদীর ওপরই নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম ছয় লেনের কালনা সেতু। এ সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছেন নড়াইল, গোপালগঞ্জ, যশোর,বেনাপোল, সাতক্ষীরা, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষ ও যানবাহন সংশ্লিষ্টরা।
কালনা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, কালনা সেতু দেশের প্রথম ছয় লেনের সেতু। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা।
তিনি আরও বলেন, এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত সেতুটি সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢাকা, ভাঙ্গা, নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, কোলকাতা পর্যন্ত সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
আশরাফুজ্জামান জানান, কালনা সেতু চালু হলে শুধু জাতীয় ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এটি।কোলকাতা, আসামসহ দেশের মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও নোয়াপাড়া নদীবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে মাইলফলক রচিত হবে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ইপিজেড (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) চালুসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, কালনা সেতু নির্মাণ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ।এ সেতু নির্মাণের কারণে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। এখন ব্যবসা বাণিজ্যের দ্বার উন্মোচিত হবে।
কালনা সেতু চালুর পর ২ ঘন্টা থেকে আড়াই ঘন্টার মধ্যে নড়াইল থেকে ঢাকায় পৌঁছানো যাবে বলে তিনি জানান।।
২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কালনাঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব মাত্র ১০৮ কিলোমিটার। ফলে ঢাকার সঙ্গে নড়াইল, বেনাপোল, যশোর, খুলনাসহ আশেপাশের সড়ক যোগাযোগে ১০০ কিলোমিটার থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে। তবে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ করা হলেও ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত এ ধরণের সড়ক নির্মিত হয়নি।
ভাঙ্গা থেকে নড়াইল-যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত ‘এক্সপ্রেসওয়ে’ সড়ক নির্মাণের বিষয়টি প্রকল্পাধীন বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী।
তিনি বলেন, কালনা সেতু চালু হলে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে। তাই আপাতত যশোরের মনিহার সিনেমা হল চত্বর থেকে নড়াইলের কালনাঘাট পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার সড়কের দুপাশে ৩ ফুট করে প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি ১৮ফুট প্রশস্ত থাকলেও তা বাড়িয়ে ২৪ ফুট করা হবে। দরপত্রের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দরপত্র অনুমোদন হলে যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হবে। নড়াইল অংশে প্রায় ৪৭ কোটি ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার এবং যশোর অংশে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ করা হবে। এক বছরের মধ্যে কাজ শেষ করা হবে। এ লক্ষ্যে সড়কের দুই পাশে গাছকাটার কাজ শুরু হয়েছে।
নড়াইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, কালনা সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, বেনাপোল, খুলনা,সাতক্ষীরাসহ পাশের জেলাগুলোর সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাবে। অল্প সময়ের মধ্যে খুব সহজেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যাতায়াত করা যাবে। আমরা কালনা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।