কালকূট পাখিটি হয় সাদা ঠোঁট আর কালো রঙের। কালকুঁচও বলে। ইংরেজি নাম Common Coot। বৈজ্ঞানিক নাম Fulica atra। শরীরের মাপ ৪০ সেন্টিমিটার। লেজ খুবই ছোট। কালকূট পানির পাখি। নিরিবিলি বিল-ঝিল, জলাশয় ও হাওর-বাওড়ই বেশি পছন্দ। দলবেঁধে থাকে, চরে বেড়ায়। অন্যান্য পানির পাখিদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে। ভালো সাঁতার জানে। ডুব দিতেও ওস্তাদ। হাঁসের মতো ডুব দিয়ে উল্টে গিয়ে পানির তলায় খাবারও খুঁজতে পারে, শুধু লেজটাই জেগে থাকে জলের ওপর। বেশ সাহসী, বুদ্ধিমান ও চালাক।
কালকূটের খাদ্য তালিকায় আছে পানির তলার উদ্ভিদ-গুল্মের কচি অংশ, ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ ও জলজ পোকামাকড়। ডাঙায় উঠেও এরা হাঁটতে পারে স্বচ্ছন্দে। সুযোগ পেলে ধানও খায়। বাসা বাঁধার জন্য এরা পছন্দ করে বড়সড় হাওর-বাওড়ের বা মরা নদীর (যে নদীর ভেতরে জন্মেছে জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম শেওলা ও স্রোত নেই) জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম বা ঘাসবন। জলের পাশের ঝোপ-ঝাড়ের ওপরে বা মাটিতে বাসা করে। দুই জনে মিলেই বাসা সাজায়।
ডিম পাড়ে ৯টি। বাফরঙা ডিম, তাতে বাদামি ছিটছোপ থাকে। ৭ ও ৮টি ডিমের সংখ্যাই বেশি। আবার ৫/৬টিও হয়। দুই জনে পালা করে ডিমে তা দেয়। ২০/২২ দিনে বাচ্চা ফোটে। বাচ্চারা উড়তে পারে ২৫-২৮ দিনে। তবে জন্মের ১/২ দিনের ভেতরই তারা বাসা থেকে জলে নেমে পড়ে এবং মা-বাবার পেছনে পেছনে ঘোরে ও ওদের পিঠেও চড়ে সুযোগ পেলে। বাচ্চাগুলো খুব চঞ্চল।
বছরের অন্যান্য সময় কালকূটকে তেমন দেখা না গেলেও শীতকালে দেখা যায় প্রচুর। আমার মনে হয়, আশপাশের দেশ থেকে আসা কালকূটদের সঙ্গে আমাদের দেশের দুই চারটা কালকূট মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আমার আরও মনে হয়েছে, খুব কম সংখ্যক কালকূট আমাদের দেশে আছে বা থেকে যায়। ওরাই এদেশে ডিম-বাচ্চা তোলে। জলের পাখিরা তাই আবাসভূমির পাশাপাশি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
কোথাও শান্তি নেই। দুদণ্ড সুস্থ হয়ে বসার জো নেই। বাসা বাঁধার জায়গার অভাবও প্রকট। পাশাপাশি খাদ্যসঙ্কট। দেশীয় জলের পাখিরা তাই চরম সংকটে আছে। শীতকালে বাংলাদেশের বহু হাটবাজার ও শহর-বন্দরে দেশি-বিদেশি জলের পাখি বিক্রি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।