শরীফ আস্-সাবের : ১. সক্রেটিস কবিতা লিখতেন না। বই লিখতেও ভালোবাসতেন না তিনি। ক্রিটো, প্ল্যাটো এবং জেনোফোনেরা বুভুক্ষের মতো তার শ্মশ্রুমণ্ডিত অসুন্দর মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতেন-গভীর অভিনিবেশ সহকারে শুনতেন, কি বলেন তিনি। সহজ ভাষায় করা সক্রেটিসের কঠিন প্রশ্নের জবাব দিতেন তারা। নভোমণ্ডলের চাঁদ-সূর্য-তারাদের সাক্ষী রেখে তিনি বলতেন, অজ্ঞতার বিবরেই জ্ঞানের নিবাস আর প্রশ্নবানে জর্জরিত করলেই জাগ্রত হয় বিবেক ও প্রতীতি। তিনি অন্যায়, অনাচার আর স্বেচ্ছাচারিতার দুষ্ট ও বিরূপ প্রভাবের কথা বলতেন। তিনি বলতেন জীবনের গূঢ় রহস্যের কথা, নৈতিকতা, মনুষত্ব্য এবং মূল্যবোধের কথা। বলতেন, মানুষ চলে যায়, কিন্তু কীর্তি, কৃতিত্ব ও মূল্যবোধ মরে না কখনো।
২. কালে, এসবই কাল হলো তার। পেলোপোনেশিয়ান যুদ্ধ থেকে ফিরে আসা অকপট সত্যভাষী জ্ঞানসৈনিক বীরকে দেয়া হলো মৃত্যুর পরোয়ানা- তার হাতে তুলে দেয়া হলো হেমলকের মরণ রস। বিষের পেয়ালা হাতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার আগে তিনি তার প্রিয় শিষ্যকুল এবং অপরাপর এথেনিয়ানদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমার প্রস্থানের সময় সমাগত। আমরা যার যার পথে চলেছি- আমি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি আর তোমরা বেঁচে আছো। এই দুইয়ের মধ্যে কোনটি উত্তম, তা একমাত্র ঈশ্বরই ভালো জানেন!’
৩. আজকের প্রকৃত দার্শনিকেরা ভাবেন, কথা বলেন, লিখেনও। কখনো কখনো চিৎকার করে আহাজারি পর্যন্ত করেন। কেউ শুনেন, কেউ শুনেন না, শুনলেও উপলব্ধি করেন না, মানেন না। আজ তাদের পাশে প্লেটো, ক্রিটোরাও নেই। তাদের কথা আত্মস্ত করে তা প্রচার কিংবা প্রসার করারও কেউ নেই। তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই, নগরীর প্রবেশপথে তাদের কোনো অধিষ্ঠান নেই। জনসাধারণ্যে, রাজপথে, বইমেলায় তাদের বিচরণ অবহেলিত, অবাঞ্ছিত কিংবা অপাংক্তেয়।
৪. মুক্তচিন্তা এখন সোনার হরিণ। রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, বুদ্ধিজীবী, আমলা সবাই এখন টাকা ও সম্পদের পূজারি, শক্তির উপাসক, তাঁবেদার। তারাই এখন সমাজের একচ্ছত্র বোদ্ধা, প্রচারক, বক্তা ও লেখক। কূপমণ্ডুকতা, অজ্ঞানতা ও ক্ষমতার বেড়াজালে বন্দি সময়ে কারোই এখন আর সক্রেটিস হয়ে ওঠার সুযোগ নেই। আজকের প্লেটো আর ক্রিটোরাও সক্রেটিয় জ্ঞান ও পদ্ধতিকে অবজ্ঞা করেন, পদ ও পদকের আশায় ক্ষমতার পাবন্দি করেন!
৫. প্রিয় সক্রেটিস, আপনার জ্ঞান, সারল্য ও প্রশ্নের ঝুলি নিয়ে ভালো থাকুন ওপারে! আর আমাদের ভবিতব্য? তা একমাত্র ঈশ্বরই ভালো জানেন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।