জুমবাংলা ডেস্ক : ২০০২ সালে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু প্রায় চার বছরেও সেই ভাইভা পরীক্ষার ফল আর প্রকাশিত হয়নি। এমনকি আদালতের নির্দেশনার পরও ফল প্রকাশে গড়িমসি করেছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। এই করুণ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন ঝিনাইদহের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আমজাদ হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মো. আশরাফুল ইসলাম (দিপু)।
জানা গেছে, ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত ২৪তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাশ আশরাফ। সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষাও দিয়েছিলেন তিনি। পরে চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য মনোনীত হলে ২০০৩ সালের ৮ আগস্ট মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হয় আশরাফের। কিন্তু এখানেই তার ভাগ্য সহায় হয়নি।
একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নির্ধারিত কোটার বিপরীতে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন আশরাফ। তার ভাষ্যমতে, ২০০১ সালে নেওয়া তার পিতার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটে তত্কালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সিল-স্বাক্ষর ছিল। তখনো মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়নি। বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসংক্রান্ত মন্ত্রণালয় গঠন করা হলে সেখান থেকে সার্টিফিকেট নেওয়ার নিয়ম চালু হয়। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার কারণে ঐ সময় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সার্টিফিকেট নেওয়া সম্ভব হয়নি (সার্টিফিকেট উত্তোলনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিলো)। তিনি পিএসসি কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন যে তার সার্টিফিকেট উত্তোলনের জন্য সময় বাড়িয়ে ভাইভার জন্য নতুন তারিখ দেওয়া হোক, অথবা ভাইভা পরীক্ষা গ্রহণ করে সার্টিফিকেট জমা দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হোক অথবা তাকে সাধারণ পরীক্ষার্থী হিসেবে (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটা ছাড়া) ভাইভা নেওয়া হোক। কিন্তু ঐ সময়কার পিএসসি কর্তৃপক্ষ এ আবেদনের কোনোটিই বিবেচনা না করে তার ভাইভা বাতিল করে দেন।
এরপর দীর্ঘদিনেও কোনো প্রতিকার না পেয়ে ২০১১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন আশরাফ। ঐ রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট আশরাফুল ইসলামের পরীক্ষা নিতে পিএসসিকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের ঐ নির্দেশের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করে পিএসসি। ২০১৪ সালে পিএসসির সেই আবেদন শুনানি নিয়ে খারিজ করে দেয় আদালত। তাতে ৩০ দিনের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে আশরাফুল ইসলাম পিএসসিতে আদালতের রায়ের কপিসহ ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন। আদালতের আদেশের দুই বছর পর মৌখিক পরীক্ষার কার্ড ইস্যু করার জন্য পিএসসি থেকে ডাক পড়ে। তিনি উপস্থিত হয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন।
এ বিষয়ে আশরাফুল ইসলাম জানান, পিএসসির রিভিউ খারিজ হওয়ার পর ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিএসসি মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে। পিএসসির তত্কালীন সদস্য আব্দুল জব্বার খানের নেতৃত্বাধীন বোর্ড প্রায় এক ঘণ্টা আশরাফের ভাইভা নেয়। এরপর শুরু হয় আরেক দফা অপেক্ষার পালা। ২০১৭ সাল গিয়ে ২০১৮ সাল শেষেও সেই ভাইভা পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ না হওয়ায় দুই বছরের মাথায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তিনি হাইকোর্টে আরেকটি রিট করেন। হাইকোর্ট রিটের শুনানি শেষে এক মাসের মধ্যে আশরাফুল ইসলামকে নিয়োগদানের আদেশ দেন। কিন্তু আজ অবধি পিএসসি সেই আদেশ বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন তিনি।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে প্রতি পদে পদে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। কোথা থেকেও সুবিচার মেলেনি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার) নূর আহমদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ সূত্র- ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।