জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (আইসি) আবদুল বারীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। কোন কাজে ফাঁড়িতে গেলেই পুলিশের এই পরিদর্শক দুর্ব্যবহার করেন। নেন না অভিযোগ, গালিগালাজ করেন অকথ্য ভাষায়। স্থানীয় ভুক্তভোগীরা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত শুক্রবার (২৪ জুলাই) ইনচার্জ আবদুল বারীর বিরুদ্ধে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার বাড়ি ফরাদপুর গ্রামে।
অভিযোগে আমিনুল বলেছেন, তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গত বৃহস্পতিবার সকালে তিনি একটি কাজে প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে পরিদর্শক আবদুল বারী তাকে গালিগালাজ করেন। এছাড়া তিনি এলাকার আরও অনেকের সঙ্গে এ ধরনের দুর্ব্যবহার করে থাকেন। এতে এলাকার মানুষ হতাশ। বিষয়গুলোর তদন্ত করে তিনি পরিদর্শক আবদুল বারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
সম্প্রতি জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে অভিযোগ দিতে প্রেমতলী পুলিশ ফাঁড়িতে যান খেতুর গ্রামের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম (৬০)। কিন্তু আবদুল বারী অভিযোগ না নিয়ে উল্টো এই বৃদ্ধাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। মনোয়ারা সেদিন বলেছিলেন, টাকা দিতে পারেননি বলে তার অভিযোগ নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি তুষার সরকারও আবদুল বারীর দুর্ব্যবহারের শিকার হন। তিনি বলেন, একটা পরামর্শ নেওয়ার জন্য তিনি পরিদর্শক আবদুল বারীকে ফোন করেন। কিন্তু এতেই ওই পুলিশ কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বিষয়টি তিনি জেলার এসপিকে ফোন করে জানিয়েছিলেন।
কয়েকদিন আগে আবদুল বারীর দুর্ব্যবহারের শিকার হন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল রানা। আজ রবিবার সকালে তিনি বলেন, তিনিও একটা কাজে ফাঁড়িতে গিয়েছিলেন। তখন তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন আবদুল বারী। তাকেও গালিগালাজ করা হয়। সোহেল বলেন, কেউ অভিযোগ নিয়ে গেলেই একপক্ষের অবস্থান নিয়ে তিনি গালিগালাজ করেন।
ইনচার্জ আবদুল বারীর বিরুদ্ধে বাড়ি থেকে ডেকে এনে প্রকাশ্যে মারধরেরও অভিযোগ আছে। সম্প্রতি এলাকার এক ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না, ফোন করে এমন অভিযোগ করার কারণে বাদশা সরকার ও মো. শাহাবুদ্দিন নামে দুই যুবককে ডেকে আনান ইনচার্জ আবদুল বারী। এরপর পেটান তিন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই)-সহ ফাঁড়ির সামনে রাস্তায় প্রকাশ্যে তাদের বেধড়ক মারদধর করেন।
মারধরের সময় বাদশা সরকার মোবাইল বের করে তার নিকটাত্মীয়দের ফোন করার চেষ্টা করেন। তখন ফোনটি কেড়ে নিয়ে লাঠির আঘাতে ভেঙে ফেলা হয়। যোগাযোগ করা হলে ভুক্তভোগী বাদশা সরকার বলেন, আইসি আবদুল বারী তিন এএসআইকে দিয়ে তাদের দু’জনকে মারধর করিয়েছিলেন। এ ঘটনায় তিন এএসআইকে ফাঁড়ি থেকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু আবদুল বারীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার মোবাইল ভেঙে ফেলা হলেও তিনি ক্ষতিপূরণ পাননি।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফাঁড়িতে কোয়ার্টার থাকলেও আইসি আবদুল বারী থাকেন না। প্রতিদিন সন্ধ্যায় রাজশাহী শহরে চলে যান পরিবারের কাছে। ফাঁড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায় না। তখন ফোন করলেই ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন। আর ফাঁড়িতে থাকলেও তিনি কোন অভিযোগ নিতে চান না। অভিযোগ না নিয়ে তিনি স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধির বাড়ি দেখিয়ে দেন। সেখানেই মিমাংসা করতে বলেন। কেন অভিযোগ নেওয়া হবে না, জানতে চাইলেই তিনি শুরু করেন গালিগালাজ। তার এমন আচরণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ পরিদর্শক আবদুল বারী। তিনি বলেন, যিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি তাকে চেনেনই না। অন্য কারও সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করেন না। কেন অভিযোগ করছেন সেটি অভিযোগকারীরাই বলতে পারবেন বলে জানান তিনি। তিনি কিছু জানেন না।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম বলেন, বিষয়গুলো তার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ হয়ে থাকলে নিশ্চয় তদন্ত করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।