সৌরজগতের চারটি গ্রহ দানবীয়। এগুলো মূলত হাইড্রোজেন, অ্যামোনিয়া ও হিলিয়াম গ্যাসে ভরপুর। এই চারটি গ্রহ হলো বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। এর মধ্যে বৃহস্পতি ও শনি গ্রহকে বলা হয় গ্যাসদানব। নেপচুন ও ইউরেনাস পরিচিত বরফদানো নামে।
সৌরজগতের মোট ভরের মাত্র এক শতাংশ এই সব গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু ও ধূমকেতুর। এই এক শতাংশ ভরের বেশিরভাগটা-ই বৃহস্পতির দখলে। এজন্য বৃহস্পতিকে বলা হয় গ্রহরাজ। এটি পৃথিবীর চেয়ে ৩১৮ গুণ ভারী! বৃহস্পতির উপগ্রহ ৬৭টি। এর বায়ুমণ্ডলের অধিকাংশই হাইড্রোজেন। এ ছাড়াও আছে হিলিয়াম ও অন্যান্য গ্যাস।
শনি তার বলয়ের জন্য সুপরিচিত। পৃথিবীর তুলনায় ৯৫ গুণ বড় এই গ্রহটি। আছে ৬২টি উপগ্রহ। এর বায়ুমণ্ডলেও আছে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসের মিশ্রণ। এ ছাড়াও আছে মিথেন ও অ্যামোনিয়া গ্যাস।
ইউরেনাসও পৃথিবীর চেয়ে ১৪ গুণ বড়। উপগ্রহের সংখ্যা ২৭টি। বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ও মিথেন গ্যাসের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। নেপচুন সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ। এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে আছে সবচেয়ে বেশি হাইড্রোজেন। এ ছাড়াও আছে হিলিয়াম ও মিথেন গ্যাস। নেপচুনের উপগ্রহ ১৪টি। এবারে একটা মজার প্রশ্ন করা যাক। আপনি কি জানেন, নেপচুনেরও শনি গ্রহের মতো বলয় আছে?
দুঃখী প্লুটো বামন হলেও আলাদা করে বলা উচিৎ এটির কথা। শতশত বামন গ্রহের মধ্যে এটি সবচেয়ে আলোচিত। কারণ, ১৯৩০ সালে প্লুটোকে গ্রহ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। প্রায় ৬০ বছর পরে, ১৯৯০-এর দশকে প্লুটোর গ্রহত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে দেখা দেয় দ্বিমত। অবশেষে ২০০৬ সালে কিছু কারণে প্লুটোর গ্রহত্ব বাতিল করা হয়। বামন গ্রহের টিকিট ধরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে।
গ্রহের মতো বামন গ্রহগুলোও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। কিন্তু গ্রহ হওয়ার ৩টি শর্ত পূরণ করতে না পারায় সেগুলো গ্রহের মর্যাদা পায়নি। প্লুটোও একইরকম, সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। অন্য কোনো গ্রহকে কেন্দ্র করে ঘোরে না। তাই এটিকে উপগ্রহ বলা যায় না। তবে গ্রহের আশেপাশে ছোট ছোট গ্রহাণু ইত্যাদি থাকে না।
মহাকর্ষীয় আকর্ষণে গ্রহ সেগুলোকে নিজের বুকে টেনে নেয়। প্লুটো যথেষ্ট ভরের অভাবে তা পারেনি। এটির আশেপাশে এরকম অনেক গ্রহাণু রয়ে গেছে। সবমিলে প্লুটো তা-ই এখন বামন গ্রহ। প্লুটো ছাড়াও সেরেস, এরিস, মাকেমাকে ও হাউমেয়া বামন গ্রহ হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
মজার কথা হলো, এর বাইরে আরও একটি সম্ভব্য গ্রহের ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘হাইপোথেটিক্যাল প্ল্যানেট এক্স’। অনেকে একে ‘প্ল্যানেট নাইন’ বা নবম গ্রহও বলেন। ২০১৬ সালে এই গ্রহটির অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারে একটি গাণিতিক প্রমাণ প্রকাশ করেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (ক্যালটেক) বিজ্ঞানীরা। সম্ভাব্য এই গ্রহটি পৃথিবীর ভরের চেয়ে ১০ গুণ ভারী।
প্লুটোর ভরের চেয়ে এটির ভর ৫ হাজার গুণ বেশি! তবে এটি এখনও হাইপোথিসিস, মানে সম্ভাবনা। ‘নবম গ্রহ আছে’—এরকম বললে ভুল হবে। তবে এই গ্রহটির সন্ধান পাওয়া গেলে কুইপার বেল্টের কিছু ছোট বস্তুর অদ্ভুত গতিপথের ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে।
আর কী আছে সৌরজগতে? নাসার তথ্য মতে গ্রহ, বামন গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়া সৌরজগতে আরও আছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৫২৭টি গ্রহাণু ও ৩ হাজার ৩৪৭টি ধূমকেতু। আটটি গ্রহের বাইরে সৌরজগতে আরও অনেকটা জায়গা আছে। এর নাম কুইপার বেল্ট। এতে আছে অনেক বামন গ্রহ, গ্রহাণু ও ধূমকেতু। প্লুটো, হাউমেয়া ও মাকেমাকে এই কুইপার বেল্টের মধ্যেই অবস্থিত। এখানকার বস্তুগুলো মূলত মিথেন, অ্যামোনিয়া ও পানি দিয়ে গঠিত।
সৌরজগতের এই বিশাল পরিসরে পৃথিবী এক ক্ষুদ্র গ্রহ। সেই গ্রহের ছোট্ট একটি দেশে বসে আমরা জানতে চেষ্টা করছি সৌরজগতের রহস্য, মহাবিশ্বের দূর প্রান্তের অজানা নানা তথ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।