শাহীন রহমান, পাবনা: গতবারের তুলনায় এবার ফলন কম হলেও দাম ভালো পেয়ে খুশি পাবনার লিচু চাষিরা। এবার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ গাছে লিচু এসেছে। এতে ফলন নেমে এসছে অর্ধেকে।
লিচুর রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদীতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো লিচু। কোনও গাছে লিচু পেকে লাল হয়ে গেছে। কোনও গাছে আবার অর্ধেক লাল, অর্ধেক কম লাল। এসব গাছ থেকে কেউ লিচুর আহরণ, কেউ যাচাই-বাচাই, কেউ বা ব্যস্ত প্যাকেট করতে।
শুধু বাগান নয়, হাটের অবস্থাও একই। চোখ যেদিকে যাবে সেই দিকেই রসালো ফল লিচুর ঝুড়ি। কারো মাথায় লিচুর ঝুড়ি, আবার কারো ভ্যানভর্তি লিচু। বেচাকেনাতেও লিচুর জমজমাট অবস্থা। লিচুর বাগান ও লিচুর হাটে এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম।
দেশের সব জায়গাতেই পাবনার লিচুর কদর রয়েছে। প্রথম দিকে পাবনার ঈশ্বরদীতে লিচুর চাষ হলেও এটি এখন জেলাব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। লিচুর চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় এটির চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিনাজপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলায় লিচুর উৎপাদন হলেও ভৌগলিক কারণে ঈশ্বরদীসহ পাবনা জেলার লিচুর বাজারজাত শুরু হয় একটু আগেই।
চলতি মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয়েছে লিচুর কেনাবেচা। প্রথম দিকে মোজাফফর জাতের লিচু দিয়ে বেচাকেনা শুরু হয়, বর্তমানে বোম্বাই জাতে লিচু বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছেন, এবছর ৪ হাজার ৭২১ হেক্টর জমিতে লিচু আবাদ হয়েছে। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৮ মেট্রিক টনের অধিক লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদী উপজেলাতেই ৩ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। যা থেকে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিক টন লিচু। মূল্য হিসেবে পুরো জেলায় লিচুর বেচাকেনা হতে পারে ৭০০ কোটির টাকার বেশি।
এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচুর ফলন কিছুটা কম। এবার লিচুর যখন মুকুল এসেছিল তখন অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে, ফলে মুকুল ঝরে গেছে। আবার যখন লিচু বৃদ্ধির সময় ছিল তখন বৃষ্টির অভাব ছিল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ছিল। ফলে লিচু আকারে ছোট হয়েছে এবং ফলন অনেক কম হয়েছে। গত বছর যে গাছে ৫-১০ হাজার লিচু হয়েছে সেই বাগানে এবার ৩-৭ হাজার লিচু হয়েছে।
তবে ফলন বিপর্যয় হলেও দামে খুশি চাষিরা। লিচুর বেচাকেনায় জমজমাট হয়ে উঠেছে লিচুর হাটগুলো। প্রথম দিকে মোজাফফর (স্থানীয় নাম আটি) জাতের লিচু বিক্রি হয়েছে হাজারে ১ হাজার থেকে ১৫শ’ টাকায়, দুই সপ্তাহ পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে সেই মোজাফফর জাতের প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ১৫শ’ থেকে ২২শ’-২৫শ’ টাকা। এ সপ্তাহের শুরুতে লিচু আরেক জাত বোম্বাই কেনাবেচা শুরু হয়েছে। বোম্বাই প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে ২৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার ওপরে।
পাবনার ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার হাটের লিচু চাষী আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এবার লিচুর ফলন কম, কিন্তু দাম খুব সুন্দর। আমরা খুশি। আমি প্রতিদিন ৪-৫ হাজার লিচু নিয়ে আসি এই হাটে। এই দাম অব্যাহত থাকলে কৃষকরা কিছু লাভবান হবে। তবে হাটের তুলনায় বাগানেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ, বাগান থেকে ব্যাপারীরা সরাসরি লিচু কিনে বাগান মালিকদের থেকে।’
সদর উপজেলার দাপুনিয়া গ্রামের লিচু চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘যখন লিচু মুকুল এসেছিল, তখনই পাবনায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে লিচুর মুকুল ঝরে গেছে। এছাড়াও কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা না দেওয়াতে লিচু অনেক নষ্ট হয়েছে। লিচু ফেটে গেছে, পচে গেছে ইত্যাদি সমস্যা দেখে গেছে। তারপরও দাম যেহেতু বেশি তাই আমরা চাষিরা খুশি।’
তবে কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার নির্দেশনার দাবি করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দীন।
তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই যে গাছে ৯০-৯৫ শতাংশ লিচু ধরে পরের বছরে সেই গাছে ৬০-৬৫ ভাগ গাছে মুকুল আসে। এ জন্য এবার ফলন কম। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। আমাদের কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার ব্যবস্থাপনা, পোকামাকড় দমন বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়েছিলাম। বৈরী আবহওয়ার কারণে গাছে স্প্রে করারও পরামর্শ দিয়েছিলাম এবং কৃষকরা সেটা করেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।