আইইউবিতে অনুষ্ঠিত হলো আদিম গ্যালাক্সির জন্মবিষয়ক একাডেমিক আলোচনা সভা। গত ১৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের (আইইউবি) নির্মীয়মাণ সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি, স্পেস সায়েন্স অ্যান্ড এস্ট্রোফিজিকসে (কাসা) এটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তৃতা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েলসলি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কাসা-সদস্য লামীয়া আশরাফ মওলা।
এ বছরের ১২ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত নেচার জার্নালে বাংলাদেশি এই বিজ্ঞানীর একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। এ গবেষণাপত্রে তিনি জেমস ওয়েব নভোদুরবিনের মাধ্যমে তোলা ছবি ও বর্ণালি বিশ্লেষণ করে প্রায় ১ হাজার ৩২০ কোটি বছর আগের একটি গ্যালাক্সি আবিষ্কারের তথ্য তুলে ধরেছেন। এ গ্যালাক্সিটির ভর শিশু মিল্কিওয়ের মতো। গ্যালাক্সিটির জন্ম বিগ ব্যাংয়ের ৬০০ মিলিয়ন বা ৬০ কোটি বছর পর। ১০টি উজ্জ্বল নক্ষত্রপুঞ্জ বা স্টার ক্লাস্টারের সমন্বয়ে গঠিত এ গ্যালাক্সির নাম দেওয়া হয়েছে ফায়ারফ্লাই স্পার্কল।
মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান বোঝাতে তিনি পৃথিবী থেকে সৌরজগৎ, নক্ষত্রপুঞ্জ, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, লোকাল গ্রুপ, ভার্গো সুপারক্লাস্টার, লোকাল সুপারক্লাস্টার হয়ে অবজারভেবল ইউনিভার্স বা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের শেষ সীমা পর্যন্ত মহাবিশ্বের বিশালতার কথা বলেন। তারপর কসমিক ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে মহাবিশ্বের ১ হাজার ৩৭০ কোটি বছরকে ১টি বছর ধরে মহাজাগতিক ইতিহাসের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন।
স্থানকালের এই বিশালতার প্রেক্ষাপটে গ্যালাক্সিদের বিবর্তন বোঝার জন্য আমরা দূত হিসেবে আলোকে ব্যবহার করতে পারি। কারণ, আলোর বেগ ধ্রুব। দুরবিন দিয়ে আমরা যত দূরের গ্যালাক্সি দেখি, তত অতীতের গ্যালাক্সি দেখা হয়। প্রথম গ্যালাক্সিদের জন্ম কীভাবে হয়েছিল, তা বুঝতে হলে এমন সেন্সিটিভ ও হাই-রেজুল্যুশনের দুরবিন দরকার, যা দিয়ে অনেক দূরের গ্যালাক্সি দেখা যায়। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ তেমনই এক দুরবিন।
তিনি ‘স্পার্কলার’ নামে পরিচিত এক গ্যালাক্সির কথা বলেন। ৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সিপুঞ্জের প্রভাবে তার মহাকর্ষীয় লেন্সিং হয়েছে। স্পার্কলারের খুব কাছে তারা বেশ কিছু ‘স্পার্কল’ পেয়েছিলেন, যারা জীবনের শেষ পর্যায়ে থাকা আদিম গ্লবুলার ক্লাস্টার, মানে তারার ঘনপুঞ্জ। এদের রং বিশ্লেষণ করে তাঁর দল বুঝেছিল, এসব গ্লবুলার ক্লাস্টার সম্ভবত বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৭০ কোটি বছর পর তৈরি হয়েছে। আর ওয়েব যখন এদের দেখছে, তখন (আজ থেকে ৪ বিলিয়ন বছর আগে) এরা মৃত্যুর কাছাকাছি।
‘ফায়ারফ্লাই স্পার্কল’, যা মহাবিশ্বের মাত্র ৬০ কোটি বছর বয়সের একটা ভ্রূণ গ্যালাক্সি। তাঁর সহকর্মী ও নেচার-পেপারটির কো-লিড কার্তিক আয়ারের স্ত্রী নূপুর এই গ্যালাক্সির ছবি দেখে বলেছিলেন, ‘গ্যালাক্সিটি দেখতে জোনাকির ঝাঁকের মতো।’ ইংরেজিতে জোনাকির ঝাঁককে বলা হয় ফায়ারফ্লাই স্পার্কল। আর এই শব্দের সঙ্গে আগের আবিষ্কৃত গ্যালাক্সি স্পার্কলারের মিল দেখেই তাঁদের এই নাম পছন্দ হয়ে যায়।
এর কাছে তাঁরা আরও দুটি ছোট গ্যালাক্সি আবিষ্কার করেন, যেগুলোর নাম রেখেছেন ‘ফায়ারফ্লাই বেস্ট ফ্রেন্ড’ (বিএফ) ও ‘ফায়ারফ্লাই নিউ বেস্ট ফ্রেন্ড’ (এনবিএফ)। কারণ, দ্বিতীয়টি পাওয়া গিয়েছিল প্রথমটির পরে। এই নাম নেচার গ্রহণ না করলেও বিবিসি ঠিকই ব্যবহার করেছে। লামীয়া মওলা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে বিজ্ঞানীরা অনেক আনন্দ নিয়ে কাজ করেন, আর এই আনন্দ থেকেই আসে ডেডিকেশন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।