জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হ ত্যার তদন্ত নতুন মোড় নিচ্ছে। দুই লেগুনাচালককে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। তাদের একজনের নাম রুবেল।
অন্যজনের নাম স্বপন। দুইজনকে খুঁজছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের পাওয়া গেলেই হ ত্যা কাণ্ড রহস্যের জট খুলতে পারে।
ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টার দিকে ফারদিনকে যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় তোলেন সাদা শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি। তিনি নিজেও লেগুনাচালক। নিজের লেগুনায় না তুলে ফারদিনকে তুলেছেন অন্যের লেগুনায়। লেগুনাটির গন্তব্য ছিল যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের তারাবর দিকে। লেগুনায় আরও চারজন লোক ছিলেন।
এটি সুলতানা কামাল ব্রিজ হয়ে বিশ্বরোডের দিকে চলে যায়। ব্রিজ পার হয়ে অন্যরা লেগুনা থেকে নেমে যান। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজে বিষয়টি ধরা পড়েছে। যে কোনো সময় লেগুনাচালক রুবেল ও স্বপন গ্রেফতার হতে পারেন। ডিবির বিশ্বস্ত সূত্র এসব নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, ফারদিন চনপাড়ায় গিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, যাত্রাবাড়ী থেকে চনপাড়া যেতে হলে অন্তত ৩০-৩৫ মিনিট সময় প্রয়োজন।
রাত সোয়া ২টায় ফারদিন যাত্রাবাড়ীতে ছিলেন। লেগুনাস্ট্যান্ডে হেঁটেছেন। রাত ২টা ৩৪ মিনিট পর্যন্ত তার মোবাইল ফোন সচল ছিল। এই ১৯ মিনিটে লেগুনাযোগে তার চনপাড়া বস্তিতে পৌঁছা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া চনপাড়া যেতে হলে লেগুনাটি ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বামে মোড় নেবে। কিন্তু লেগুনাটি বামে না গিয়ে সোজা তারাব বিশ্বরোডের দিকে চলে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সময় ও দূরত্ব বিবেচনা অনুযায়ী রাত আড়াইটার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে কোনোভাবেই ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়া সম্ভব না।
তাই মনে হচ্ছে, ফারদিন যে লেগুনায় উঠেছে, সেই লেগুনার চালক, হেলপার এবং অন্য যাত্রীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলতে পারলেই ঘটনার রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি। আশা করছি, দ্রুতই এ ঘটনার রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে।
ডিবিপ্রধান বলেন, ফারদিন যে লেগুনায় উঠেছেন, সেটির ধারণক্ষমতা ১৮ জন যাত্রী। কিন্তু প্রকৃত অর্থে ওই লেগুনায় ছিল ফারদিনসহ পাঁচজন। তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ফারদিনের অবস্থান ছিল রামপুরায়। রাত ১১টার ছিলে কেরানীগঞ্জে। সোয়া ১১টায় ছিলেন জনসন রোডে। রাত ১টায় ছিলেন গুলিস্তানে। এত দ্রুত তিনি কেন স্থান পরিবর্তন করেছেন, সেটি এখনো আমাদের কাছে রহস্যজনক।
আমরা সেই রহস্য রের করার চেষ্টা করছি। তাকে প্রলোভন দেখিয়ে, নাকি জোর করে এসব স্থানে নেওয়া হয়েছে, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি। তার মুভমেন্ট, গতিবিধি গভীরভাবে পর্যালোচনার পাশাপাশি আমরা এটিও বের করার চেষ্টা করছি যে, ঘটনার রাতে ফারদিন কোনো কারণে মানসিক বিপর্যস্ত ছিল কি না।
কিন্তু তার বন্ধবী বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত তিনি ফারদিনের সঙ্গে ছিলেন, ওই সময় পর্যস্ত তাকে খুবই স্বাভাবিক মনে হয়েছে। তারা রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে খেয়েছেন। তবে দুইজন আলাদাভাবে বিল পরিশোধ করেছেন।
৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা কাজী নূরউদ্দিন রানা বাদী হয়ে ফারদিনের বান্ধবী বুশরাকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় বুশরাকে গ্রেফতারের পর ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের শেষে ইতোমধ্যে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তার কাছ থেকে খুনের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে ডিবি জানায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার ডিবি কার্যালয়ে ছেলে হত্যার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কাজী নূরউদ্দিন রানা। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
র্যাবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘রায়হান গ্যাংয়ের সঙ্গে আমার ছেলের কী নিয়ে বিরোধ থাকবে? বুঝলাম সে (রায়হান) একটা খারাপ মানুষ। কিন্তু আমাকে বোঝান, আমার ছেলেটাই কেন তার টার্গেটে পড়বে? সে কেন ওখানে (চনপাড়ায়) যাবে? কীভাবে সম্ভব সেটা! কোন তথ্যের ভিত্তিতে দেখাবেন সেখানে আমার ছেলেটা মুভ করেছে? সে যদি সেখানে না থেকে থাকে, তাহলে এসব বলার অর্থ কী?’
কাজী নূরউদ্দিন রানা বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার শিকার হয়েছে। এখন নানা কথা বলে মামলাটাই পালটে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আগাম কথাবার্তা বলা উচিত নয়।’
মামলায় কোনো মোটিভ পাওয়ার বিষয়ে তদন্ত সংস্থা কিছু জানিয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নূরউদ্দিন রানা বলেন, ‘না, আমাকে সেরকম কিছু জানানো হয়নি। তারা (ডিবি) আমাকে ডেকেছে, ছেলের পড়াশোনা, বয়স, মাদকে জড়ানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছে। সে মুক্তমনা ছিল কি না, যেসব জায়গায় গিয়েছে, সেসব জায়গায় অন্য কোনো বন্ধু রয়েছে কি না, এসব বিষয় জানতে চেয়েছে।’
আপনি আগে বলেছিলেন, বাসা থেকে ফারদিনের হলে ফেরার কথা ছিল। হলে যাওয়ার কথা বলেই ফারদিন বের হয়েছিল। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে ফারদিন হলে না ফিরে যাত্রাবাড়ীতে গেছে।
এর আগে সে এরকম করেছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে নূরউদ্দিন রানা বলেন, ‘অতীতে এমন রেকর্ড নেই। পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করে বা জানিয়ে সব করে সে। নিখোঁজ হওয়ার আগ পর্যন্ত সে তার মাকে যা জানিয়েছে, সে অনুযায়ী চলতে দেখেছি। কিন্তু এখন ঠিক বুঝতে পারছি না সে আসলে কেন গিয়েছিল যাত্রাবাড়ীতে। কারা তাকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়েছে-এসব প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মাদকের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে প্রমাণের অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু ডিবি আমাকে ক্লিয়ার করেছে যে, মাদকের সঙ্গে ফারদিনের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। আমিও এর আগে বলেছি। আমার ছেলে কখনো ধূমপান করত না। এমনকি ধোঁয়াও সহ্য করতে পারত না।’
বিদেশ যাওয়া নিয়ে কোনো স্ট্রেস বা অবসাদে ভুগছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, সেরকম কিছু নয়। আমার ছেলে ছোটবেলা থেকেই গল্প-উপন্যাস পড়ে বড় হয়েছে। কোনো কারণে বিদেশ যেতে না পারলে ভেঙে পড়ার মতো ছেলে সে নয়। ওর চরিত্রের মধ্যে সেরকম কিছু নেই। হত্যার বিষয়ে ডিবি পুলিশ ও র্যাব জোর দিয়ে তদন্ত করছে। তবে তদন্তসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা আছে বলে মনে হচ্ছে। আর এটা থাকলে আমি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হব বলে আশঙ্কা করছি।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ফারদিনের বান্ধবী বুশরা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। অথচ মামলায় তাকে আসামি করা হলো। বুশরার জন্য আপনার খারাপ লাগছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুশরা যদি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকে, তাহলে তো অবশ্যই খুব খারাপ লাগবে। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতে বুশরার সঙ্গে ফারদিনের ৫-৬ ঘণ্টা কাটানোর কথা নয়। আর তাকে বাসার পাশে নামিয়ে দেওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল ফারদিন। তাই আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না যে, বুশরা এ হ ত্যা কাণ্ডে জড়িত না।’
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ফারদিন হ ত্যায় জড়িতদের প্রায় খুঁজে বের করা হয়েছে। নজরদারিতে আছে। র্যাবের দাবি, চনপাড়ার রায়হান গ্যাং ও তার সহযোগীরা মিলে ফারদিনকে হ ত্যা করেছে। রায়হান ও সহযোগীদের আটক করা হয়েছে বলে খবরও বেরিয়েছে। র্যাব কি আপনাকে ডেকে এসব ব্যাপারে কিছু জানিয়েছে?
আপনি কি মনে করেন, ফারদিন চনপাড়ায় হ ত্যার শিকার হয়েছে? এসব প্রশ্নের জবাবে বাবা নূরউদ্দিন বলেন, ‘জিডি করার পর র্যাব থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে মামলা দায়েরের পর থেকে তারা কোনো আপডেট দেয়নি।’ সূত্র : যুগান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।