রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: চরের জমিতে মরিচের ফলন ভালো হয়। পাকার পর লাল টুকটুকে সেই মরিচ নদী পার হয়ে ঘোড়ার গাড়িতে আসে গাইবান্ধার ফুলছড়ি হাটে। সেখান থেকে ভটভটি ও ট্রাকবোঝাই হয়ে সারাদেশে যায় সেই লাল মরিচের ঝাল।
হাটের ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, এখানকার হাটে পাশের জামালপুর, রংপুর, বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার আসে। একেক হাটে লাল মরিচের বিক্রিবাট্টার পরিমাণ হাজার মণের বেশি। টাকার অঙ্কে তা কোটির ওপরে।
এ হাটের অন্যতম ইজারাদার জহিরুল ইসলাম জানান, ফুলছড়ির মরিচের হাট এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড়। সরকার এখান থেকে অনেক রাজস্ব আয় করে। তবে এখানে সড়কপথে যাতায়াতের রাস্তাটি একটু সরু। হাটটিও ভাড়া করা জায়গায় বসে। হাটটির উন্নয়ন দরকার।
ফুলছড়ি উপজেলা শহরটি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত। ভাঙনের কারণে এখানে আর উপজেলা পরিষদের অফিস-আদালত খুব একটা নেই। সেগুলো চলে গেছে কালীগঞ্জ বাজারে। তবে ঐতিহ্যবাহী হাটটি রয়ে গেছে ঘাটের পাড়েই। সপ্তাহে শনি ও মঙ্গল– দুদিন হাট বসে।
এ উপজেলার বাসিন্দা ও স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, হাটের দিন গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি ছাড়াও পাশের জামালপুরের ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চরের লোকজন এখানে মরিচ বিক্রি করতে আসেন। কিনতে আসেন বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা।
সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, ঘাট থেকে চরের ধূলা উড়িয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে বোঝাই হয়ে মরিচ আসছে হাটে। পাইকারের সাথে দরদাম মিটলে তা তোলা হচ্ছে বড় বড় দাঁড়িপাল্লায়। সেখান থেকে বস্তাবোঝাই হয়ে তা উঠছে ট্রাক ও ভটভটির ওপর। চলে যাচ্ছে বিভিন্ন গন্তব্যে।
একটি ট্রাকের চালক আব্বাস উদ্দিন জানালেন, তিনি বগুড়া থেকে এসেছেন। তাঁর ট্রাকে ৫০-৬০ মণ মরিচ ধরে।
ইজারাদার ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ হাটে দিনে হাজার মণের বেশি মরিচ ওঠে। প্রতি মণ মরিচের দাম এখন প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সেই হিসাবে হাজার মণ মরিচের দাম দাঁড়ায় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
কথা হয় বিক্রেতা ফজলু মিয়ার সাথে। তিনি এসেছেন বরুর চর থেকে। তিনি বলেন, তাঁর প্রায় দেড় বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ। আজ প্রায় ৫ মণ মরিচ হাটে এনেছেন। সামনে ইদ। এই মরিচ বেচে ইদের খরচও করবেন।
বগুড়া থেকে মফিজুল ইসলামসহ তিনজন এসেছেন মহাজনের পক্ষ থেকে মরিচ কিনতে। মরিচ কিনে পাশেই বস্তাবন্দী করছে শ্রমিকেরা। সেগুলো তোলা হচ্ছে ট্রাকে।
মফিজুল জানান, তাঁর মহাজন বিভিন্ন কোম্পানিকে মরিচ সরবরাহ করেন। আজ ৬০ মণ মরিচ কিনেছেন। তিনি আরও বলেন, বগুড়া মরিচের জন্য বিখ্যাত হলেও ফুলছড়ি হাটেই মরিচ বেশি ওঠে। এখান থেকেই মরিচ যায় বগুড়ায়।
নওগাঁ থেকে মরিচ কিনতে এসেছিলেন সাহেব মিয়া। তিনি ভটভটিতে করে মরিচ নিয়ে যাচ্ছেন। কিনেছেন ৩০ মণ।
সাহেব মিয়া বলেন, উত্তরাঞ্চলে মরিচের সবচেয়ে বড় হাট ফুলছড়ি। এখানেই নিয়মিত মরিচ কিনতে আসেন।
হাটে ট্রাক-ভটভটি পার্কিয়ের দেখাশোনা করেন রাজা মিয়া। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি এ কাজ করেন। তখন থেকেই এ হাটের জৌলুস দেখে আসছেন। প্রতিদিন ঘোড়ার গাড়িতে করে এখানে মরিচ আসে। একেক হাটে ৩০/৪০টি ট্রাক-ভটভটি লোড হয়ে চলে যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।