অনিল চন্দ্র রায়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে বাঁশ ও কাঠের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ পাঁচটি সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসী। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপজেলার ৫০ গ্রামের লাখো মানুষ।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি কান্দাপাড়া ইন্দুর ঘাটে বারোমাসিয়া নদীতে ১শ ফিট ও কিশামত শিমুলবাড়ী নবিউলের ঘাটে বারোমাসিয়া নদীতে ১২০ ফিট বাঁশের তৈরী সাঁকো অপর দিকে ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর এলাকার নীলকোমল নদীতে ১৫০ ফিট কাঠের তৈরি সাঁকো ও ভাঙ্গামোড় বামনের খামার এলাকায় টাংয়ারছড়ায় ১৬০ ফিট বাঁশের তৈরি সাঁকো এবং ফুলবাড়ী ইউনিয়নের বালাতাড়ি এলাকায় নীলকোমল নদীতে ২০২ ফিট কাঁঠের তৈরী সাঁকো দিয়ে গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে পারাপার। যেন দেখার কেউ নেই।
আজ মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাঁচটি বাঁশ ও কাঠের তৈরি সাঁকোর বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হলো। এই সাঁকোগুলো হলো নাওডাঙ্গা ইউনিয়নে কিশামত শিমুলবাড়ী ও পশ্চিম ফুলমতি কান্দাপাড়া এলাকায় বানীদাহ (বারোমাসিয়া) নদীতে সেতু না থাকায় হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার। একই ইউনিয়নের একই নদীতে এলাকাবাসী প্রতিবছরেই নিজেদের প্রচেষ্টায় নবিউলের ঘাটে ১২০ ফিট ও ইন্দুর ঘাটে ১০০ ফিট বাশেঁর সাঁকো তৈরি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড়াপাড় করছে। এই চরম দুর্ভোগের শিকার ওই এলাকার প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ। প্রতিদিন বোয়ালমারী, উত্তর শিমুলবাড়ী, কিশামত শিমুলবাড়ী, নাওডাঙ্গা, শালমারী, তালুক শিমুলবাড়ী, খারুয়ার চড়, গোরকমন্ডল, চর-গোরক মন্ডল, পশ্চিম ও পূর্ব ফুলমতি, ঝাউকুটি গ্রামের কোমলমতি শিক্ষর্থীসহ হাজার হাজার মানুষ অনেক কষ্ট করে ভাঙ্গা বাঁশের তৈরী সাঁকো দিয়ে পাড়াপাড় করছে। তারা জরুরী প্রয়োজনে দুইপাড়ের বাসিন্দারা ১০ থেকে ১২ কি. মি. ঘুরে বালারহাট বাজার ও ফুলবাড়ী সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বর্তমানে ওই দুইটি বাঁশের তৈরী সাঁকো নরেবরে হওয়ায় অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বানীদাহ নদীটি ধরলার একটি শাখা নদী। এই নদীটির দৈর্ঘ্য শুধুমাত্র দুই কিলোমিটার। এটি ভারতের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সীমান্তবর্তী মরাকুটি গ্রাম দিয়ে বানীদাহ বাংলাদেশের উত্তরের জেলার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় গোরকমন্ডপ দিয়ে প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নীলকুমোর নদীর উপর ১৫০ ফিট লম্বা কাঠের কাঠের তৈরি রেলিংবিহীন ও পাঁচ বছরের পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুটি দেখেও কোনও প্রকার তা সংযোজনের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সেতুটির পাশে নেই সর্তকীকরণ সাইন র্বোড।
উপজেলার সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর এলাকায় এই সেতুটি অবস্থিত। ফলে প্রতিদিনেই ভাঙ্গা পাটাতন ও রেলিংবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পাড়াপাড়ের সময় অহরহ দূঘর্টনার শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুটি রেলিং সংযোজনসহ দ্রুতগতিতে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই সেতু দিয়ে পশ্চিম নগরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,দক্ষিণ নগরাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর নগরাজপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়,নগরাজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও নগরাজপুর কামিল মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ পশ্চিম নগরাজপুর বালাতাড়ি, অজেটারি, দক্ষিণ নগরাজপুর, কলতাটারী, উত্তর নগরাজপুর, ভাঙ্গামোড়,বামনের খামার, ফকিরটারীসহ ১০টি গ্রামের ২০ থেকে ৩০ হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। সেই সাথে ওই এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির্পর্ণ নরবরে রেলিং বিহীন সেতু দিয়ে উপজেলার স্কুল-কলেজে যাতায়াত করছেন।
অন্যদিকে একই ইউনিয়নের ভাঙ্গামোড় বামনের খামার টাংয়ারছড়া উপর দিয়ে ১৬০ ফিট লম্বা বাঁশের তৈরী সাকোঁটি সরেজমিনে দেখা গেছে,দুই থেকে তিন বছরের পুরাতন সাকোঁটি প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সাকোঁটির দক্ষিণ দিকের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে যায়। তারপরেও নেই কোনও সস্কারের উদ্যোগ। এই নরেবরে বাঁশের সাঁকো দিয়ে দশ গ্রামের হাজারও মানুষ চরম দুর্ভোগ সহ্য করে পাড়াপাড় হয়। যেন দেখার কেউ নেই। দুই বছর আগে স্থানীয় মামিনুর ইসলামের মা আমেনা বেগম চলার অযোগ্য সাকোটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পড়ে মারাক্তক আহত হয়েছে। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমেনা বেগম (৫৫) মারা যান। অনেকেই পড়ে আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ফুলবাড়ী ইউনিয়নের আবাসন সংলগ্ন বালাটারী গ্রামের নীলকমল নদীর উপর কাঠের তৈরি ২০২ ফিট লম্বা সেতুটি র্দীঘদিন ধরে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সেতুটির রেলিং না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ পাড়াপাড় করছে। রেলিংবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দেখেও কোনও প্রকার তা সংযোজনের উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতিদিনেই নষ্ট পাটাতন ও রেলিংবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে পাড়াপাড়ের সময় অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
উপজেলার সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দুরে এই সেতুটি অবস্থিত। এই সেতু দিয়ে উপজেলার মাঝিটারী, বালাটারী, কুমারটারী ও বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়ার কামালপুর, হাবিবপুর, ফুলসাগর আবাসনের ১৮০ টি পরিবারসহ হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র সহজ পথ এই সেতুটি। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের সেতু দিয়ে খুব অল্প সময়ে উপজেলার স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। ওই এলাকার হাজার হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতুটির রেলিং সংযোজনসহ মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।
ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর এলাকার ছলিমুদ্দিন (৭২) জালাল উদ্দিন (৪০) ও বিশ্বজিৎ কমুার (৪২) জানান, পাঁচ বছর তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১৫০ ফিট লম্বা কাঠের সেতুটি নির্মান করেছে। নির্মাণের পর থেকে সেতুটির মেরামতের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বর্তমান ইউনিয়ণ পরিষদসহ কর্তৃকপক্ষ। দুই থেকে তিন বছর থেকে এলাকাবাসীর তিন-চার মাস পরপর নিজস্ব উদ্যোগে মেরামত করে কোনরকমে পাড়াপাড় করছি। এখন এই সেতুটির অবস্থা বর্তমানে খুবেই খারাপ। নিচের কোন খঁটি ভাল নেই। সবগুলোই পুরাতন হয়ে গেছে। সেতুটি পুরাতন হওয়ায় পাটাতন খুলে যাচ্ছে। যেন কোন সময় বড় দুঘর্টনার ঘটতে পারে। এমনিতে সেতুর দুই পাশে রেলিং না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভয় ভয় করে সেতু পাড় হতে হয়।
একই ইউনিয়নের বামনের খামার এলাকার সাইদুল হক সরকার (৪০) ও আমিনুর রহমান (৫০) জুমবাংলাকে জানান, বামনের খামার টাংয়ারছড়া উপর দিয়ে ১৬০ ফিট লম্বা বাঁশের তৈরি সাকোঁটি খুবেই ঝুঁকিপূর্ণ এবং চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। অনেকই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে। অনেকেই পারাপার করার সময় আহত হয়েছে এবং দুই বছর আগে আমেনা বেগম (৫৫) নামের এক নারী নিহত হয়েছেন। বর্তমানে অনেকেই ওই সাকোঁ দিয়ে পাড়াপাড় করতে ভয় লাগে । তাই বেশির ভাগ মানুষ এক কোমর পানি হেঁটে পাড়াপাড় করছে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি এলাকার শিক্ষার্থী পরিমল চন্দ্র রায়, আশরাফুল, রুপালী খাতুন, রুমী আক্তার জুমবাংলাকে জানান, কিশামত শিমুলবাড়ী নবীউলের ঘাট ও পশ্চিম ফুলমতির ইন্তুর ঘাটে এ বানিদাহ নদীতে দ্রুত সেতুর দাবি জানান। এখানে সেতু হলে দুই পাড়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন ও পশ্চিম ফুলমতি গ্রামের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জুমবাংলাকে জানান, আমরা বহুবার হাজার হাজার মানুষের কথা চিন্তা করে এই দুই ঘাটে ব্রীজের জন্য আবেদন করেছি। এখানে সেতুটি হউক এটা এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবী।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আসিফ ইকবাল রাজীব জুমবাংলাকে জানান, নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি কান্দাপাড়া ইন্দুর ঘাট এলাকায় বারোমাসিয়া নদীর উপর ব্রিজের জন্য ঊদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করেছে। আশাকরি সামনের অর্থ বছরে নতুন ব্রিজের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। বাকিগুলোর বিষয়ে ঊদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং পর্যায়ক্রমে ওই সব স্থানে ব্রিজের ব্যবস্থা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।