জুমবাংলা ডেস্ক : মুহুরী নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এবার সিলোনিয়া নদীতে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই উপজেলায় অন্তত ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি।
বুধবার (৩ জুলাই) মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের আরেকটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এতে নতুন এলাকা এলাকা প্লাবিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, গত তিনদিনে মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০টি স্থান ভেঙেছে। তার মধ্যে ফুলগাজীর দৌলতপুর ও পরশুরামের শালধরের দুটি স্থানে ভাঙনের মাত্রা বেশি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফুলগাজীর দৌলতপুরে ভাঙন অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ কমলেও পরশুরামে শালধরে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেল থেকেই মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নামতে শুরু করেছে। তবে বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থান দিয়ে এখনো নদীর পানি গ্রামের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে নতুন করে আর ভাঙার সম্ভাবনা নেই
ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় হতে দুর্গত এলাকায় মানুষদের সহায়তার জন্য ২০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ টাকা ও ২০০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। বন্যার্তদের মাঝে তা বিতরণের কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া জানান, বাঁধ ভেঙে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নে ৮টি, দরবারপুরে ৩টি, আমজাদহাট ৫টি ও মুন্সিরহাট ৫টি সহ মোট ২১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১ হাজার ৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া মাছ ধরতে নিহত যুবকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা করা হয়েছে।
ফুলগাজীতে নতুন করে প্লাবিত হওয়া গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিয়নের আমজাদ হাট, দরবারপুর, বসন্তপুর, জগতপুর, নিলক্ষী, গোসাইপুর, করইয়া, গাবতলা। এছাড়া উপজেলার পশ্চিমে প্রবাহিত সিলোনীয়া নদীর তারালিয়া অংশের ভাঙনে নোয়াপুর, বসন্তপুর, দরবারপুর, শ্রীপুর, জয়পুর দেড়পাড়াসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ভারত সীমান্তবর্তী গ্রাম জামমুড়া, ফকিরের খিল, পৈথারা এবং কামাল্লা গত কয়েক দিনের উজানের পানিতে প্লাবিত হয়ে আছে।
এ ব্যাপারে ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামের শালধর ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ফুলগাজীর নিলক্ষী গ্রাম দিয়ে নামছে। এতে করে নতুন নতুন গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বুধবার (৩ জুলাই) রাতে এ প্রতিবেদন লিখা পর্যন্ত পরশুরামে মুহুরী নদীর শালধর অংশে ভাঙা বাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা হাবিব শাপলা জানান, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণের বাঁধের দক্ষিণ শালধর এলাকার জহির চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন একটি অংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বন্যায় ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে ৫৫০ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পরশুরামের দক্ষিণ শালধর, মালিপাথর, গোসাইপুর, বাঘমারা, টেটেশ্বর, চাড়িগ্রাম, গদাগ্রাম, মনিপুর, উত্তর গাবতলী এবং পাগলিরকুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বুধবার বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভাঙন স্থান দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। নদীর পানি কমলে ভাঙন এলাকা মেরামত করা হবে।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম। এসময় আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণ হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের পাহাড়ি ঢল হবে না বলে আশা করছি।
এ ব্যাপারে আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী নাসিম বলেন, টেকসই বাঁধ নির্মাণে দাপ্তরিক কাজ দ্রুততার সাথে চলছে। এই প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৯শ কোটি টাকা হবে। এর দ্রুত বাস্তবায়ন হলে স্থায়ী সমাধান হবে। এতে মানুষের কষ্ট এবং ফসলহানি রোধ হবে। মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীতে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সমীক্ষা করা হয়েছে এবং এজন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে।
মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যায় নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৬৭ স্থানে ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে। এতে গত ৬ বছরে বাঁধ সংস্কারে ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, জলের টাকা জলেই গেছে। এতে বাঁধ ভাঙন রোধ হয়নি, স্থানীয়দের দুর্দশাও মেটেনি। বরং বর্ষা মৌসুমে বাঁধের যেকোনো স্থান যেকোনো সময় ভাঙতে পারে, এ নিয়ে আমাদের শঙ্কা আজও দূর হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবার একই জায়গা বারবার ভাঙে। তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দও দেওয়া হয়। একই ঠিকাদার বাঁধ মেরামতের কাজ করে। বন্যা হলে কিছু অসাধু কর্মকর্তার কপাল খুলে যায়।
সোমবার (১ জুলাই) রাতে মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাতেই মুহুরী বাঁধের একটি স্থান ভেঙে ফুলগাজী বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে তিনফুট পানি উঠে বন্ধ ছিল যান চলাচল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।