জুমবাংলা ডেস্ক : কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে আবারও ডুবে গেছে বন্দরনগরীর একাধিক এলাকা। বৃষ্টিতে ওয়াসার মোড়, দুই নম্বর গেইট, বাকলিয়া, আগ্রাবাদ সিডিএ, হালিশহর, অক্সিজেন, বহদ্দারহাট, চকবাজার, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জসহ নগরীর নিচু এলাকাগুলো হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেক জায়গায় পানিতে গনপরিবহন বিকল হয়ে যাওয়ায় জনসাধারণ পড়েছেন ভোগান্তিতে। সকাল থেকে বৃষ্টির ও জলাবদ্ধতার কারণে অতিরিক্ত ভাড়া গুনে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে নগরবাসীকে। আর এ জলাবদ্ধতার জন্য নগরীর খালগুলো দখল এবং নালা নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়াকে দায়ী করলেন নগরবাসী।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, সকাল নয়টা পর্যন্ত ৫১ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী দুই দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ থানা এলাকায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার সকাল ৯টার দিকে আরেফিন নগরের বিশ্ব কবরস্থান সংলগ্ন মাঝেরঘোনা পাহাড়ে এই ভূমিধ্বস ঘটনা ঘটে। এতে প্রথমে দুইজন নিখোঁজ থাকলেও পরে তাদের উদ্ধার করা হয়।
বায়েজিদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রিটন সরকার বলেন, বৃষ্টিতে ভূমিধসে দুই জন মাটিচাপা পড়েন। তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
এদিকে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধসে দুইজন নিহত হয়েছেন। আজ শনিবার সকালে এই ঘটনা ঘটে।
রাঙামাটির ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক এসএম শফি কামাল জানিয়েছেন, রাউজান থেকে বাগান দেখার জন্য একটি সিএনজি অটোরিকশা করে বাঙ্গালহালিয়া থেকে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে রাইখালী-বাঙ্গালহালিয়া সড়কের কারিগর পাড়ায় পাশের পাহাড়ধসে অটোরিকশার ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। এর আগে গেল সোমবার উপজেলার চন্দ্রঘোনার কলাবাগান এলাকায় পাহাড় ধসে দুইজন নিহত হয়েছিল।
এছাড়াও আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। কিছু এলাকায় পানি উঠে যাওয়ায় বানভাসি মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় লাখে।
এসব উপজেলার সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাতকানিয়ার বাজালিয়া মীরেরপাড়া এলাকায় শঙ্খ নদের বাঁধ ভেঙে তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে পড়ছে। দ্রুত অবনতি হচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির।
জানা গেছে, লোহাগাড়া উপজেলায় টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কের অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। বড়হাতিয়া, আমিরাবাদ, সুখছড়ি, কলাউজান, পুটিবিলা, আধুনগরসহ উপজেলার বহু গ্রামের সড়ক পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আধুনগরে ডলু নদীর ভাঙনে খালপাড়ে বহু কাঁচা বসতঘরে পানি ঢুকেছে।
পটিয়া উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, কচুয়াই, খরনা, ভাটিখাইন, ছনহরা, ধলঘাট, হাবিলাসদ্বীপ, জিরি, কুসুমপুরা, আশিয়া, কোলাগাঁও ছাড়াও পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বর্ষণ ও ঢলের পানিতে উপজেলার কচুয়াই, ছনহরা ও ভাটিখাইন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আনোয়ারার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, বৈরাগ, চাতরী ও পরৈকোড়া ইউনিয়নের ওষখাইন, কৈখাইন, শিলালিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নসহ উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। জোয়ারের পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ভারি বৃষ্টিপাতে দুই উপকূলীয় ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বোয়ালখালীতে পাহাড়ি চাষাবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাহাড় থেকে শাকসবজি, লেবু ও পেয়ারা পানির স্রোতে ভাণ্ডালজুরি খাল দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে অনেক চারাগাছও। খালের পাশে থাকা একাধিক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ভাণ্ডালজুরি পাড়ের বাসিন্দা তোয়াব আলী জানান, টানা বৃষ্টিতে তাঁদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোকারম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি ঘর একেবারে বিলীন হয়ে গেছে। তা ছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে গুচ্ছগ্রাম, আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীদের নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দিয়েছি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করার কাজ চলছে। তাঁদের সহযোগিতা করা হবে।’
বাঁশখালীতে টানা বৃষ্টিতে উপকূলীয় এলাকা সরল, গণ্ডামারা, চনুয়া, পুঁইছড়ি, চাম্বল, কাথারিয়া, বাহারছড়া, পুকুরিয়াসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ ভয়াবহ বন্যার আতঙ্কে রয়েছে। এরই মধ্যে তলিয়ে গেছে নদীপাড়ের গ্রামসহ রাস্তাঘাট। স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে তিন ফুট পানি বেড়ে যাওয়ায় তলিয়ে গেছে বিভিন্ন ফসলি জমি।
চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার উল্লাপাড়া, সরকারপাড়া, চাগাচর, জামিজুরী, ঈদপুকুরিয়া, খানবাড়ি, দিয়াকুল, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, পূর্ব দোহাজারী, লোকমানপাড়া, চাগাচর নতুনপাড়া এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোবারক হোসেন বলেন, ‘শুধু সাতকানিয়ায় ৫০ হাজার পরিবারের অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।’ অন্যদিকে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।