জুমবাংলা ডেস্ক: যুগ্ম সচিবের জন্য আটকে থাকা ফেরি ছাড়তে পায়ে পর্যন্ত ধরেছিলেন প্রাণ হারানো স্কুল ছাত্র তিতাস ঘোষের স্বজনরা। দেরি হলে ছেলেটি মারা যেতে পারে, এই আশঙ্কার কথা বারবার বলেছিলেন তারা। কিন্তু তাদের কথায় কেউ কর্ণপাত করেনি। তবে ছেলেটি মারা যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবাই এখন নানা যুক্তি দেখিয়ে নিজেকে বাঁচাতে চাইছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে মাদারীপুরের শিমুলিয়া ফেরি ঘাটে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা জানার পর সারাদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে।
স্বজনরা বলছেন, তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়তে ভেজা চোখে অনেক কাকুতি মিনতি করেছেন। পায়ে পড়েছেন! তবুও মন গলেনি ঘাটের দায়িত্বরতদের। তারা যুগ্ম সচিব আব্দুস সবুর মণ্ডলের গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। তার জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা ফেরি থামিয়ে রাখেন। এমন কি প্রতিকার মেলেনি জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ কল করেও।
ফেরির দেরিতে ছোটভাই তিতাসকে হারিয়ে বড়বোন কেয়া ঘোষ ফেসবুকে একটি আবেগঘণ স্ট্যাটাস দিয়েছেন। নিচে স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো।
‘আমরা সাধারণ মানুষ বলে কি, আমাদের জীবনের কোন মূল্য নেই? সাধারণ মানুষের জীবনের চেয়ে একজন ভিআইপির আত্মীয়ের ভ্রমণের জন্য তিন থেকে চার ঘন্টা ফেরি আটকে রাখা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিচের ছবি গুলো আমার ছোট ভাইয়ের, গত ২৪-০৭-১৯ তারিখে তার বাইক এক্সিডেন্টে তার অবস্থা খুবই গুরুতর হয়,তার মস্তিকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য আমরা ২৫-০৭-১৯ তারিখ তাকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কিন্তু যখন আমরা কাঠালবাড়ি ফেরি ঘাট-১ এ আনুমানিক রাত আটটায় পৌছায় তখন জানতে পারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের কোন একজন ভিআইপির আত্মীয় বিয়ে খেতে যাবে। তাই আনুমানিক তিন ঘন্টা যাবত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তিনি আসবেন বলে রাত আটটা থেকে এগারটা পযর্ন্ত অপেক্ষা করান, আমাদের সাথে আরও তিনটা এম্বুলেন্সে গুরুতর রোগী ছিলেন। আমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় ,কোন উপায় না দেখে স্থানীয় পুলিশ, সেনাবাহিনীর লোকজন, পুলিশ আইজিপি, এমনকি 999 হেল্প লাইনে ফোন করি। কিন্তু কারো থেকে কোন সাড়া পাইনি, এমনকি ফেরি কতৃপক্ষের কাছে শত আকুতি জানানোর পরও তারা বলে যে ভিআইপির অনুমতি ছাড়া ফেরি ছাড়লে নাকি তাদের চাকরি থাকবে না। পরে আমরা পুলিশের মাধ্যমে সেই ভিআইপিকে আমাদের অবস্থার কথা জানায় কিন্তু তিনি কোন ভ্রুক্ষেপই করে নাই। অবশেষে ৩ ঘন্টা পর সেই ভিআইপির গাড়ি এল,গাড়িটি ছিল নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের তারপর ফেরি চলল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমরা ফেরিতে প্রায় মাওয়া ঘাটের বেশ কাছাকাছি তখন আমার ভাই শেষ নিংশ্বাস ত্যাগ করে । একটা ফুলের মত জীবন ঝরে গেল শুধুমাত্র নৌ-মন্ত্রনালয়ের ভিআইপির আত্বীয়ের খামখেয়ালি কারণে । এভাবে আমাদের দেশে বহু জীবন যায় তাদের খামখেয়ালির কারণে। এভাবেই কি চলবে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।