লাইফস্টাইল ডেস্ক : একদিন এক মহাশয়ের মনে হলো ফেসবুক আর চালাবেন না। লাইফস্টাইলে একটা বড় পরিবর্তন আনার জন্য একঘেয়ে এই মাধ্যম এবার ছেড়ে দেওয়া জরুরি। ভালো কথা। বাড়িতে গিয়ে প্রথমে ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভেট করলেন। কিন্তু মেসেঞ্জার তো অন আছে। এভাবে আসলে তার ফেসবুক ছাড়া হলো না।
এরকম অনেকেই আছেন যারা ফেসবুক ফিডটাকে দূরে সরিয়ে দেন আর মেসেঞ্জারে থাকেন। সেটাও ভালো। ফেসবুক ফিডের যন্ত্রণাদায়ক কন্টেন্ট থেকে মুক্তি পাওয়া গেল। মেসেঞ্জারে শুধু প্রয়োজনীয় কজনের সঙ্গেই যোগাযোগ রয়েছে। এই ধরনের মানুষের সঙ্গে আর নতুন মানুষের যোগাযোগের পথ থাকে না। তাদের জীবনেও একটু একটু পরিবর্তন আসতে শুরু করে।
এখন অনেকেই মেসেজিং অ্যাপের ক্ষেত্রে শুধু পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেন। তাই অনেকেই মেসেঞ্জার বা হোয়াটস অ্যাপটিকেই প্রাধান্য দেন। তারপরও কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা একেবারেই ফেসবুকে থাকেন না। তারা ফেসবুক থেকে দূরে থাকার জন্য চলে যান বাটন ফোনে। কিন্তু ইন্টারনেট ছাড়া তো টিকে থাকা একটু মুশকিল। সমস্যা নেই, কম্পিউটার তো আছেই।
২০২১ সালে ‘জার্নাল অব কমিউনিটি সাইকোলজি’তে প্রকাশিত ‘অ্যাসোসিয়েশন বিটউইন দ্য ইউজ অব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটস অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ অব ইয়াং জেনারেশন অব বাংলাদেশ: আ ক্রস-সেকশনাল স্টাডি’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায় দেশের ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মধ্যে নিঃসঙ্গতায় ভোগেন ৬৪ শতাংশ, ডিপ্রেশনে ভোগেন ৩৮ শতাংশ, সাধারণ উদ্বেগে ভোগেন ৬৩ শতাংশ, আর ঘুমের ব্যাঘাতের সমস্যায় ভোগেন ৭৫ শতাংশ।
এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০২০ সালের ডাটা অনুযায়ী, ৬৪ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান মনে করেন সোশ্যাল মিডিয়া তাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবু ৭২ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান কমপক্ষে একটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাউন্ট ব্যবহার করেন।
কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি ভিন্ন। একথা সত্য ফেসবুক যারা ব্যবহার করেন তারা নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। তবে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেই খ্যাতির চেষ্টায় কন্টেন্ট বানানোর চেষ্টা করেন। আবার অনেকে এখন টিকটক বা অন্য মাধ্যমে চলে যাচ্ছেন। তরুণদের একটি বড় অংশ ইউটিউবে ঝুঁকে পড়ছে। এ নিয়ে এখনও কোনো বড় গবেষণা হয়নি তবে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সময় এ খবর দিয়েছেন। সারাবিশ্বেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বাড়ছে। তবে ফেসবুকে একসময় বিরাট একটি অংশ লেখালেখি করতেন। তারা ফেসবুক থেকে সরে আসছেন। বড় কন্টেন্ট লেখার সুযোগ না পেয়ে তারা ফেসবুক থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, উগ্র কমেন্ট এবং পোস্ট অনেকেরই পছন্দ নয়। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। লাইফস্টাইলে এখন যুক্ত হচ্ছে স্পটিফাই, টেলিগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য ওটিটি প্লাটফর্ম। ফেসবুক থেকে দূরে থাকায় অনেকে নিজেকে সময় দিতে পারছেন। এমনকি তারা এখন বই পরা, খেলাধুলা, বন্ধুদের সঙ্গে মুখোমুখি আড্ডা দিতে পারছেন। তাই ফেসবুক থেকে একেবারে দূরে থাকায় অনেকে মানসিকভাবেও কিছুটা ভালো আছেন। বিশেষত ফ্রিল্যান্সিং খাতে যারা যুক্ত হচ্ছেন তাদের অনেকেই ফেসবুক থেকে সরে যাচ্ছেন। এটিও একটি ভালো দিক। তবে কিছু খারাপ দিকও আছে। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে না পারাও এক ধরনের একাকীত্ব তৈরি করে। কিন্তু ফেসবুকে মাত্রাতিরিক্ত নেশা থেকে তা ভাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।