বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : নিত্যদিনের সঙ্গী যখন স্মার্টফোন, তখন তার মধ্যে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবেই। অথচ অনেক সময়ই আমরা তথ্যগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাই না। খুব বেশি হলে দেখা যায়, মেমরি কার্ডে কপি করে রেখে দিই। অথচ মেমরি কার্ড নষ্ট হয়ে যাওয়া খুব সাধারণ ব্যাপার। সে ক্ষেত্রে ডাটা ব্যাকআপের একটা সমাধান ফোনে চালু রাখা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
আইফোনের জন্য আছে আইক্লাউড
নিরাপত্তাজনিত কারণে আইফোনে থাকা ব্যক্তিগত তথ্যগুলো অ্যাপল অন্য কোনো অ্যাপ নির্মাতা বা সেবা প্রদানকারীদের ব্যবহার করতে দেয় না। সে জন্য আইফোন ব্যবহারকারীরা ফোন নম্বর, কল লগ, এসএমএস, ফটো এবং অ্যাপ ডাটা ব্যাকআপ রাখতে চাইলে ব্যবহার করতে হবে অ্যাপলের সেবা। সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে আইক্লাউডে সব ব্যাকআপ রাখা। কিন্ত সেখানে সমস্যা হচ্ছে জায়গা। মাত্র ৫ গিগাবাইট জায়গা পাওয়া যাবে বিনা মূল্যে। আইক্লাউডের জন্য খরচ করতে না চাইলে, পিসিতে আইটিউনসের মাধ্যমেও ফোনের সব কিছু ব্যাকআপ রাখা যাবে। সে ক্ষেত্রে আইটিউনসে অটোমেটিক ব্যাকআপ চালু রেখে, ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে ফোন ব্যাকআপের অপশন চালু করতে দিতে হবে। তাহলে যখনই ফোন আর পিসি এক নেটওয়ার্কে থাকবে, নিজ থেকেই সব তথ্য হয়ে যাবে ব্যাকআপ। আরো একটি উপায় আইফোন ব্যবহারকারীরা কাজে লাগাতে পারেন, তা হচ্ছে শুধু ফোন নম্বর, এসএমএস এবং ছোট তথ্য আইক্লাউডে ব্যাকআপ রেখে ছবিগুলো রাখতে পারেন গুগল ফটোজে। সে ক্ষেত্রে প্রায় সব কিছুই রইল ক্লাউডে, আবার পকেটের ওপরও পড়ল না চাপ।
গুগল ফটোজ আছে না?
অ্যানড্রয়েড ব্যবহারকারীদের জন্য তথ্য ব্যাকআপ রাখার অ্যাপ ও সেবার শেষ নেই। বেশ কিছু সেবা একত্রে ব্যবহার করে ফোনের সব কিছুই রাখা যাবে নিরাপদ, বাড়তি ঝামেলা ছাড়াই।
ফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ক্যামেরায় তোলা ছবি। আর সেটি নিরাপদে রাখতে গুগল ফটোজের জুড়ি নেই। ফোনে গুগল ফটোজ অ্যাপটি ইনস্টল করে, নিজের গুগল অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগইন করলেই অপশন পাওয়া যাবে প্রতিটি ছবি ব্যাকআপ রাখার। ছবি ব্যাকআপ কতগুলো রাখা যাবে, তার ওপর কোনো লিমিট নেই, তবে সেগুলোর মান কিছুটা কমিয়ে দেবে গুগল। ক্যামেরার বাইরেও অন্যান্য ফোল্ডারের ছবি ও ভিডিও বেছে দেওয়া যাবে ফটোজে ব্যাকআপ করার জন্য। তবে যাঁরা চাইবেন, তাঁদের ছবিগুলোর মান একটুও না কমিয়ে ব্যাকআপ রাখা হোক, তাদের ক্ষেত্রে গুগল ড্রাইভের জায়গা ফটোজের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে ফটোজের বিনা মূল্যের সেবাই সবচেয়ে কম ঝামেলার বলা যেতে পারে। ছবি ব্যাকআপ রাখার জন্য গুগলের বাইরেও ব্যবহার করা যেতে পারে ড্রপবক্স, মেগা বা ওয়ানড্রাইভ। তবে সেগুলোর ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে পাওয়া জায়গা শেষ হয়ে গেলে গুনতে হবে বাড়তি জায়গার জন্য মাসিক ফি।
হারাবে না ফোন নম্বরও
ফোন নম্বর হারানো আরো একটি বিরক্তিকর সমস্যা। বিশেষ করে ফোন হারালে বা ছিনতাই হয়ে গেলে দেখা যায় আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। অথচ গুগল অ্যাকাউন্টে নম্বরগুলো সেভ করলেই সমস্যা মিটে যায়। এর জন্য বাড়তি কোনো টাকাও গুনতে হবে না। পিসি থেকে সেভ করা নম্বরগুলো দেখতে হলে পড়হঃধপঃং.মড়ড়মষব.পড়স-এ গিয়ে আইডি পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করলেই হবে। এর বাইরেও ইজি ব্যাকআপ বা সুপার ব্যাকআপের মতো অ্যাপগুলো দিয়ে কনট্যাক্টসের একটি ফাইল মেমরি কার্ডে নেওয়া যাবে, যা অন্য ফোনে পাঠানো যাবে ক্লাউডের ওপর ভরসা না করেই। অনলাইনের পাশাপাশি অফলাইন ব্যাকআপও সমান গুরত্বপূর্ণ।
এসএমএসের মাধ্যমে আজকাল প্রচুর গোপনীয় তথ্য আমরা পাঠিয়ে থাকি। সেগুলো সুরক্ষিত রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে বেশ কিছু অ্যাপ। যেমন—সুপার ব্যাকআপ, এসএমএস ব্যাকআপ অ্যান্ড রিস্টোর। এ ধরনের অ্যাপগুলো ফোনের মেসেজ বক্সের সব বার্তা একটি ডাটা বেইস ফাইল বা এক্সেল ফাইল হিসেবে ইন্টারনাল স্টোরেজ, মেমরি কার্ড বা গুগল ড্রাইভে সংরক্ষণ করতে পারবে। অটোমেটিক ব্যাকআপ চালু রাখলে নিজ থেকেই প্রতিটি মেসেজ গুগল ড্রাইভ বা অন্যান্য ক্লাউডসেবায় ব্যাকআপ হয়ে যাবে, ফোন হারালেও সমস্যা নেই। সাধারণত কনট্যাক্টস এবং এসএমএস একই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাকআপ রাখা যায়।
ছবি বা চলচ্চিত্রের বাইরে অন্য ফাইলগুলো ব্যাকআপ রাখতে চাইলে গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স, মেগা বা ওয়ানড্রাইভের সেবা ব্যবহার করা যেতে পারে। ফোনে এ সেবাগুলোর অ্যাপ ইনস্টল করে অ্যাকাউন্টে লগইন করার পর পাওয়া যাবে ফাইল আপলোড করার অপশন। ব্যস, এবার যে ফাইল ইচ্ছা সেটাই নির্বাচন করে আপলোড করা যেতে পারে। তবে জায়গার পরিমাণ মাথায় রাখতে হবে। গুগল ড্রাইভ বিনা মূল্যে দিয়ে থাকে ১৫ গিগাবাইট, ওয়ানড্রাইভ ও ড্রপবক্স ৫ গিগাবাইট এবং মেগা দিয়ে থাকে ৫০ গিগাবাইট। বাড়তি জায়গা মাসিক বা বার্ষিক মূল্যে কেনা যেতে পারে। ফাইল অটো আপলোডের সুবিধা পাওয়া যাবে ড্রপ বক্সের ক্ষেত্রে। তবে ড্রপ বক্সের বেশির ভাগ সেবাই আজ বেশ দামি।
বিভিন্ন মেসেঞ্জারের চ্যাটলগ সাধারণত ব্যবহারকারীর আলাদা করে ব্যাকআপ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে গুগল ড্রাইভে ব্যাকআপ নেওয়ার জন্য অ্যাপের সেটিংস থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করতে হবে।
ফোনে ইনস্টল করা অ্যাপগুলোর বেশির ভাগ তথ্য গুগল ড্রাইভে সহজেই ব্যাকআপ করে রাখা যায়। সে ক্ষেত্রে ফোনের সেটিংস থেকে ব্যাকআপ অ্যান্ড রিস্টোর অপশনে গিয়ে অ্যাপ ডাটা অপশনটি চালু করতে দিতে হবে। এখানে চাইলে কল লগ, এসএমএস থেকে শুরু করে ফোনের নানাবিধ সেটিংস এবং ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ডও গুগল ক্লাউডে ব্যাকআপ করে রাখা যাবে। ফোন রিসেট করলে ক্লাউড থেকে সেগুলো আবার রিস্টোর হয়েও যাবে।
অ্যাপে লগইন করার আইডি পাসওয়ার্ড এখন গুগলে নিজ থেকেই সেভ করার অপশন থাকলেও, লাস্টপাস তার চেয়ে আরো বেশি সহজ ব্যবহার করা। বিশেষ করে বারবার নতুন করে পাসওয়ার্ড তৈরি করারও প্রয়োজন পড়বে না, লাস্টপাস নিজ থেকেই কঠিন পাসওয়ার্ড তৈরি করে তা সেইভ করে রাখবে। লাস্টপাসের বেশির ভাগ সেবাই পাওয়া যাবে বিনা মূল্যে; কিন্তু চাইলে প্রিমিয়াম সেবার জন্য সাবস্ক্রিপশন নেওয়া যেতে পারে।
স্যামসাং, শাওমি এবং ওয়ান প্লাসের ক্ষেত্রে তাদের নিজস্ব কিছু ব্যাকআপ সুবিধাও আছে। স্যামসাং অ্যাকাউন্ট, শাওমির মি ক্লাউড অ্যাকাউন্ট আইফোনের মতো ফোনের প্রায় সব তথ্য তাদের নিজস্ব ক্লাউডে জমা রাখতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রেও বাড়তি জায়গা কেনা অনেকটা বাধ্যতামূলক। তবে এ দুটি ব্র্যান্ডের ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে সহজে ফোনের সব কিছু ব্যাকআপ রাখতে পারবেন, শুধু একটি মি বা স্যামসাং অ্যাকাউন্ট করেই। ওয়ানপ্লাসের ক্ষেত্রে একটি ওয়ানপ্লাস ফোন থেকে অন্য ওয়ানপ্লাস ফোনে তথ্য পাঠানো যাবে ওয়ানপ্লাস সুইচ অ্যাপের মাধ্যমে।
সব শেষে যেসব অ্যানড্রয়েড ব্যবহারকারী জটিলতা নিয়ে মাথা ঘামান না, তাদের জন্য আছে টাইটেনিয়াম ব্যাকআপ বা হিলিয়াম ব্যাকআপ। রুট করা কোনো ফোনে এ দুটি অ্যাপ প্রায় সব কিছুই ব্যাকআপ রাখতে পারে—এমনকি সব ডাটাসহ অ্যাপ বা গেইমও ব্যাকআপ করে ক্লাউডে বা ফোনের স্টোরেজে রাখা যাবে। তবে রুট বা ডেভেলপার মোডের এডিবি অপশন ছাড়া এগুলো কাজ করবে না। যারা পিসিতে এডিবি ব্যবহার করেছেন, তারা চাইলে ফোনের পূর্ণাঙ্গ ব্যাকআপ নিতে পারবেন এডিবি ব্যবহার করেই, রুটেরও প্রয়োজন হবে না। তবে এ সমাধানগুলো সহজ নয়, সাধারণ ব্যবহারকারীদের এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোরও দরকার নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।