গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুরের কেশরিতা এলাকায় লাক্সারি ফ্যান কারখানায় গত ১৫ ডিসেম্বর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০ শ্রমিক নিহত ও ২ জন দগ্ধের ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
মঙ্গলবার বিকেলে ওই তদন্ত কমিটির সদস্যরা অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কারখানাটি পরিদর্শন এবং শ্রমিক ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘আমাদের যে নিয়ম-কানুন আছে, মিনিমাম নিয়ম-কানুন তারা মেনে চলেনি। বড় স্থাপনা হলেও জরুরি কোনো এক্সিট পয়েন্ট (বাহিরের পথ) নেই। যে কারণে ১৯ জন শ্রমিকের মধ্যে ১০ জনই মারা গেছেন। মূলত পেছন দিকে যদি একটি গেট থাকত, তাহলে তারা সেখান থেকে উদ্ধার হতে পারত।’
তিনি বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং ভবন মালিক উভয়কে আমরা দায়ী মনে করছি। কারণ, এটি একটি আবাসিক এলাকা, একটি নিভৃত গ্রাম। সেই গ্রামে এ রকম একটি ফ্যানের কারখানা ভাড়া দেয়া মোটেই উচিৎ হয়নি। পাশাপাশি যারা কারখানাটি করেছেন তারাও যেহেতু এ কারখানায় অকটেনের মতো দাহ্য পদার্থ ব্যবহার হয়, এখানে বিস্ফোরক থেকে ছাড়পত্র নেয়ার কথা ছিল, পরিবেশ এবং ফায়ার থেকে ছাড়পত্র নেয়ার দরকার ছিল। তারা যদি এই ছাড়পত্রগুলো নিতো, তাহলে তাদেরকে নিয়মের মধ্যে আনতে বাধ্য করা হতো। তাহলে, ইমার্জেন্সি গেট করার নির্দেশনা হয়ত থাকত। সেক্ষেত্রে তারা বেঁচে যেতে পারত।’
তিনি জানান, এ রকম দুর্ঘটনা যাতে আর না ঘটে তারা শক্তভাবে রিপোর্ট প্রদান করবেন। অন্য যে কারখানা আছে, সেগুলোর ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেবে তারা। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রত্যেক উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি করে দেয়া হবে। যাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়।
এসময় তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম, শিল্প পুলিশ-২ সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম, গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ, কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. ইউসুফ আলী উপস্থিত ছিলেন।
এর কিছুক্ষণ পর গাজীপুরের সংরক্ষিত আসনের এমপি ও জাতীয় মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি বেগম শামসুন নাহার কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে এমপি শাসসুন নাহার বলেন, ‘প্রত্যন্ত এলাকায় একটি বাসাবাড়ির উপরে একটি টিনসেড করে কারখানা। এটি দেখে বোঝার উপায় নাই। গাজীপুরের একজন নাগরিক, শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বলতে চাই, এটা ঠিক না।’
তিনি বলেন, ‘আজকে সরকার শ্রমজীবী মানুষদের বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা জন্য কাজ করছে, তাদের মজুরি বৃদ্ধি করছে। আর কিছু সংখ্যক লোভী মানুষ নিজেদের ব্যবসার জন্য কোনো রকম আইনের তোয়াক্কা না করে, না মেনে করার কারণে বছর তিনেকের মধ্যে প্রায় ৫/৬টি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে অনেকগুলে তাজাপ্রাণ আমরা হারিয়েছি। এর জন্য আমি মর্মাহত।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংসদ সদস্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একজন মেম্বার হিসেবে আগামী মিটিংয়ে আমি এ বিষয়গুলো তুলব।’
এসময় তিনি শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘কোথাও যদি এরকম অবৈধ কারকাখা থাকে, সেটা সাথে সাথে কলকারখানা পরিদর্শক অথবা জেলা প্রশাসনে অথবা আমাকে জানাবেন। তাহলে এগুলো প্রতিহত করতে পারবো বলে আশা প্রকাশ করি।
শামসুন্নাহার বলেন, ‘যে সমস্ত মালিকের কার্যকলাপের কারণে নিরীহ শ্রমিকরা মারা গেছে, আমি তাদের শাস্তি দারি করি। অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিক আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানাই’।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।